ইউক্রেন সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের একটি গ্রামে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে বলে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা জানিয়েছেন। রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে—সংবাদমাধ্যমের এমন অসমর্থিত প্রতিবেদন তদন্ত করে দেখছে ন্যাটো মিত্ররা। খবর রয়টার্সের
গতকাল দিনভর ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদিনের হামলাকে প্রায় ৯ মাসের রুশ আগ্রাসনের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বলে জানিয়েছে কিয়েভ। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমাঞ্চলীয় লিভিভ শহরে আঘাত হেনেছে। শহরটির দূরত্ব পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটারের কম।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ড। সদস্যদেশগুলোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষার বিষয়ে ন্যাটো অঙ্গীকারবদ্ধ। ইচ্ছাকৃত কিংবা দুর্ঘটনাবশত হোক, রাশিয়ার হামলার কারণে সৃষ্ট এ বিস্ফোরণ শঙ্কা বাড়িয়েছে।
একজন ন্যাটো কর্মকর্তা বলেছেন, বিস্ফোরণের খবর জোট খতিয়ে দেখছে এবং পোল্যান্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় রক্ষা করে যাচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণের বিষয়ে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে টুইট করেছেন ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ।
ন্যাটোপ্রধান আরও বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। ন্যাটো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করছে। সব তথ্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’
একটি বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামটিতে বিস্ফোরণ পোল্যান্ডে ঢুকে পড়া রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে হয়েছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত হতে পারেনি।
পেন্টাগন মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেন, ‘ইউক্রেন সীমান্তের কাছে পোল্যান্ডের অভ্যন্তরে দুটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে—এমন অভিযোগ এনে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টি আমরা অবহিত। আমি আপনাদের বলতে পারি, এই সংবাদগুলোকে সমর্থন করার মতো কোনো তথ্য আমাদের কাছে এই মুহূর্তে নেই। আমরা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখছি।’
এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণের পর সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে পোল্যান্ড। পোলিশ সরকারের মুখপাত্র পিওর মুলার দুজন পোলিশ নাগরিক নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পিওর মুলার বলেন, ‘পোল্যান্ড সামরিক ইউনিটগুলোর প্রস্তুতি জোরদার করছে। আমাদের ন্যাটোর “আর্টিকেল ফোর” সক্রিয় করতে হবে কি না, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’
ন্যাটোর আর্টিকেল ফোরে বলা হয়েছে, ‘যখনই কোনো সদস্যদেশের মনে হবে, সদস্যদেশগুলোর কারও আঞ্চলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, তখনই সদস্যদেশগুলো মিলে বিষয়টি আলোচনা করবে।’
অন্যদিকে রাশিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড আক্রমণ করেছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি সামষ্টিক নিরাপত্তার ওপর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এটি খুবই বড় ধরনের উসকানি। আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তবে রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রই পোল্যান্ডে আঘাত হেনেছে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নয়। একজন রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি বলেছে, রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম নয়। বরং ইউক্রেনের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা অস্বাভাবিক আচরণ করলে এ ঘটনা ঘটতে পারে।