দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭৭ বছর পর জার্মানিতে আবারও একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধী নারীর নাম ইর্মগার্ড ফুর্চনে। তাঁর বয়স এখন ৯৭ বছর।
বিচারের প্রথম দিনে ইর্মগার্ড ফুর্চনে আদালতে হাজির হননি। বিচারের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বিচারপতির কাছে চিঠি লেখেন। তারপর তিনি আত্মগোপন করলেও পরে গ্রেপ্তার হন।
আজ বুধবার উত্তর জার্মানির স্লেসভিগ হোলস্টাইন প্রদেশের ইতজেহো জেলা আদালতে শুনানি চলে। আদালতের বিচারপতি নিশ্চুপ না থেকে সত্য ঘটনা প্রকাশে মুখ খুলতে ইর্মগার্ড ফুর্চনেকে অনুরোধ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) চলাকালে অপরাধী ইর্মগার্ড ফুর্চনে বর্তমানে পোল্যান্ডের ডানজিগ শহরের কাছে স্টুথফ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। যুদ্ধচলাকালীন হিটলারের নাৎসি বাহিনী জার্মানিসহ দখল করা প্রতিবেশী দেশগুলোতে যে অসংখ্য বন্দিশিবির স্থাপন করেছিল, তাদের মধ্যে একটি ছিল স্টুথফ বন্দিশিবির। এই বন্দিশিবিরে ১১ হাজার বন্দীকে হত্যা করা হয়েছিল।
যুদ্ধের সময় অপরাধী ইর্মগার্ড ফুর্চনে এই বন্দিশিবিরের কমান্ড্যান্টের সেক্রেটারি ও শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। স্লেসভিগ হোলস্টাইন প্রদেশের ইতজেহো জেলা আদালত পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের একজন মুখপাত্রের মতে, ইর্মগার্ড ফুর্চনে ইহুদি, পোলান্ডের নাগরিক, নাৎসিবাদবিরোধী জার্মান ও সোভিয়েত যুদ্ধবন্দীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য শিবিরের অন্য দায়ী ব্যক্তিদের সহয়তা করেছিলেন।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইর্মগার্ড ফুর্চনে স্লেসভিগ হোলস্টাইন প্রদেশে চলে আসেন এবং আবারও টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি পিনেবার্গ জেলার পেনশনভোগী ও একটি বৃদ্ধা আবাসস্থলে থাকেন।
সাবেক বন্দিশিবির সেক্রেটারি ইর্মগার্ড ফুর্চনের বিচার এক বছরের বেশি সময় ধরে চললেও তিনি কিছুই বলছেন না।। গতকাল ২৯ নভেম্বর স্টুথফ বন্দিশিবিরে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আইনজীবীরা আদালতে স্টুথফ ক্যাম্পের ভয়াবহতার বিষয়ে বলার জন্য আবারও অভিযুক্তকে আহ্বান করেন।
রায় ঘোষণার আগে গতকাল স্টুথফ বন্দিশিবিরে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আইনজীবীরা বন্দিশিবিরের ভয়াবহতা ও হত্যার কাজে তাঁর সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নানাভাবে জেরা করার চেষ্টা করলেও তিনি মৌনতা অবলম্বন করেন।
আদালতে ইর্মগার্ড ফুর্চনের উদ্দেশে আইনজীবী সাশা ব্লোমার বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক এবং শেষ সুযোগটি ব্যবহার করুন।’
আইনজীবী আর্নস্ট ফ্রেইহার ফন মুঞ্চহাউসেন বলেন, ‘এই জীবনসায়াহ্নে সত্যকে তুলে ধরলে আপনি মানুষ হিসেবেই গণ্য হবেন। আপনি আপনার কৃতকর্মের দিকে ফিরে তাকান। যুদ্ধের সময় সবকিছু কি সত্যিই সঠিক ছিল? আমাদের সবারই আপনার কাছ থেকে আমাদের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার আছে। আপনি কিছু না বললে ভুক্তভোগীরা কখনই শান্তি পাবে না।’
এর কোনো জবাব না পেয়ে আইনজীবী আর্নস্ট ফ্রেইহার ফন মুঞ্চহাউসেন আদালতকে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অপরাধীরা এমনভাবে আচরণ করেছেন, যেন নাৎসি হিটলারের শাসনামলে কিছুই ঘটেনি। এ আদালতেও অভিযুক্ত ইর্মগার্ড ফুর্চনে হুইলচেয়ারে বসে আছেন। তিনি সজাগ হয়ে সবকিছু শুনেও চুপ করে আছেন।
আদালতে ইর্মগার্ড ফুর্চনের আইনজীবীরা অভিযুক্ত হিসেবে তাঁর নীরব থাকার অধিকার আছে বলে জানান।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বারবার তাঁকে নীরব থাকার অভিযোগ এনেছেন এবং আদালতের কাছে তাঁরা ইর্মগার্ড ফুর্চনেকে ন্যূনতম দুই বছরের সাজা দেওয়ার দাবি করেছেন।
উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর আদালত আগামী ৫ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।