ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেলের (৪১) একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে মার্কিন সাময়িকী ‘দ্য কাট’। সাক্ষাৎকারে অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন মেগান। রাজকীয় জীবন এবং কেন তিনি ও তাঁর স্বামী ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি রাজকীয় পদমর্যাদা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন— সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ও উঠে এসেছে। মেগান মার্কেল বলেন, শুধু রাজপরিবার ছেড়ে আসার মধ্য দিয়ে রাজপরিবারে ‘বিদ্যমান ক্ষমতার শৃঙ্খল ভেঙে দিয়ে রাজপরিবারকে বিচলিত করেছেন’ তিনি।
রাজপরিবার ছেড়ে আসা প্রসঙ্গে মেগান বলেন, রাজকীয় মর্যাদা ছেড়ে চলে আসতে অনেক কিছুই করতে হয়েছে তাঁদের। এ ছাড়া তাঁর স্বামী প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তাঁর বাবা ও রানি এলিজাবেথের উত্তরসূরি প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লসের সম্পর্ক নিয়েও খোলামেলা নানা কথাও বলেছেন মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল।
মার্কেলের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে সম্মান নষ্টের অভিযোগে ‘দ্য মেইল অন সানডে’–এর বিরুদ্ধে মামলার প্রভাব সম্পর্কে সাংবাদিক অ্যালিসন পি ডেভিসের প্রশ্নে মেগান বলেন, ‘হ্যারি আমাকে বলেছে, ‘‘এই প্রক্রিয়ায় আমি আমার বাবাকে খুঁইয়েছি। আমার জন্য এটা যা, তাদের ক্ষেত্রে তো সেটা না। কিন্তু এটা তাঁর সিদ্ধান্ত।’’’
পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মেগানের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি। মেগানের ওই মুখপাত্র বলেন, সাক্ষাৎকারে মেগান তার বাবার কথা বলেছেন, যাঁর কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন এবং তিনি সেখানে যা বলেছিলেন তা হলো, নিজের সঙ্গে যা হয়েছে তাঁর স্বামীর সঙ্গেও যাতে তা না হয়, এমনটা আশা করেন তিনি।
প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, এমন একটি সূত্রের বরাতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা পিএ। সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী প্রিন্স চার্লস বলেছেন, প্রিন্স হ্যারি যদি বলে থাকেন বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে, তাহলে তিনি মর্মাহত। চার্লস আরও বলেন, ‘প্রিন্স অব চার্লস তাঁর দুই সন্তানকেই ভালোবাসেন।’
বাবার সম্পর্ক খারাপ হওয়া নিয়ে এর আগেও কথা বলেছিলেন ৩৭ বছর বয়সী প্রিন্স হ্যারি। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, বাবা প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে একাধিক কল করেও তিনি সাড়া পাননি। আর এমন ঘটনা ঘটে ২০২০ সালে হ্যারি–মেগান দম্পতি রাজকীয় পদবি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর।
ওই সময় হ্যারি ও মেগান তাঁদের রাজকীয় পদবি ও পদমর্যাদা ‘রয়্যাল হাইনেস’ ছেড়ে দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এটা করছেন বলেই তখন জানায় এ দম্পতি। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরশীল হতে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয় তাঁদের জন্য। যদিও প্রিন্স হ্যারি জন্মসূত্রে রাজপুত্র বা প্রিন্স।
এ ঘটনার আগে হ্যারি ও মেগান কমনওয়েলথে রাজপরিবারের সদস্যদের মতো কাজ চালিয়ে যাওয়ার এবং নিজস্ব অর্থ উপার্জনের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। এই আশায় তাঁরা এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, যাতে করে তাঁদের নিয়ে চারপাশে যে কানাঘুষা চলছে তা যাতে কিছুটা হলেও কমে; কিন্তু তা হয়নি।
মেগান বলেন, ‘কী কারণে জানি না, তখন এটা করার অনুমতি আমাদের দেওয়া হয়নি। যদিও রাজপরিবারের অনেক সদস্য ঠিক এভাবে এ কাজ করে থাকেন।’
রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হ্যারি ও মেগান দম্পতি প্রথমে কানাডার টরন্টো যান। সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। কিন্তু কানাডা যাওয়ার পরে তাঁরা জানান, তাঁদের যে পারিবারিক নিরাপত্তা দেওয়া হতো, তা আর দেওয়া হচ্ছে না। এরপরে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। যেখানে মিডিয়া মোগল টাইলার পেরির দেওয়া একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। এরপরে অবশ্য তাঁরা মন্টেনিকোতে একটি বাড়ি কিনেছেন।
বিবিসি বলছে, মেগান একজন আলোচিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। অনেক অনুসারী রয়েছে তাঁর। তিনি প্রায়শই বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা মন্তব্য করে থাকেন। সম্প্রতি এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার মাধ্যমে তিনি নতুন করে রাজপরিবার নিয়ে বোমা ফাটালেন। রাজকীয় জীবনে কত কত অন্যায় সহ্য করতে হয় এবং চাপে থাকতে হয় তা নিজের অনুসারীদের জন্য আবারও তুলে ধরলেন মেগান। আরও বোঝালেন যে কেন তাঁরা রাজকীয় জীবন ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তবে মেগানের সমালোচকেরা আবার বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলেছেন, আত্মপ্রচারের জন্য মেগান আবারও বিভ্রান্তিকর নানা মন্তব্য করেছেন। আর এবারই যে প্রথম, তা নয়। এর আগেও তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। যেমন বিয়ের সময় মেগান বলেছিলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার কারামুক্তির সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে উৎসবের আমেজ পড়ে গিয়েছিল ঠিক তেমনি প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তাঁর বিয়ের খবরেও দেশটিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছিল ও অভিনন্দিত হয়েছিলেন তাঁরা।
বিবিসি বলছে, হাঁসফাঁস করা রাজকীয় জীবন তাঁরা ছাড়তে চেয়েছিলেন; কিন্তু রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক এখনো তাঁদের সবচেয়ে বড় সম্পত্তি হয়ে রয়ে গেছে। এটা এমন যে একসময় হুল্লোড় করে জীবন কাটিয়ে আসা মানুষেরা তাঁদের অতীত নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না, যদিও তাঁদের নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ সেই কারণেই। এ ছাড়া তাঁরা নিজেদের ওপর গণমাধ্যমের আকর্ষণ ধরে রাখতে চান। কারণ, এতে স্পটিফাই বা নেটফ্লিক্সের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফায়দা পাবেন তাঁরা।