ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্কে আরও অগ্রসর হয়েছে রুশ বাহিনী। গতকাল বুধবার রাশিয়া দাবি করে, পূর্বাঞ্চলে তাদের সেনাদের হামলায় ইউক্রেনের সেনারা পিছু হটেছে। পিছু হটার বিষয়ে কিছু না বললেও ইউক্রেনের দাবি, রুশ বাহিনীর কিছু হামলা তারা প্রতিহত করেছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি ‘জটিল’ বলে জানিয়েছে কিয়েভ।
গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়, লুহানস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের সেনারা পিছু হটেছে। যেখানে দুই পক্ষের মুখোমুখি লড়াই চলছিল, রুশ বাহিনীর হামলার মুখে সেখান থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার পিছু হটে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে এ নিয়ে আর বিস্তারিত তথ্য জানায়নি রাশিয়া।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে ক্রেমলিন। এ দুই অঞ্চলে নতুন করে রুশ বাহিনীর বড় ধরনের একটি অভিযান আসন্ন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধে এখন রাশিয়ার মূল চেষ্টা হচ্ছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুত শহর দখল করা। শহরটি লুহানস্কের সঙ্গে সীমানালাগোয়া।
বাখমুত শহরের দখল নেওয়া রুশ বাহিনীর জন্য এখন কৌশলগতভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাখমুতের দখল নিতে পারলে রুশ বাহিনীর জন্য দোনেস্কের দুই বড় শহর ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক দখলে নেওয়ার পথ সুগম হবে। এ জন্যই কয়েক মাস ধরে বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
এদিকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী অবশ্য রুশ বাহিনীর হামলায় তাদের সেনাদের পিছু হটার বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে কিয়েভ বলেছে, রুশ বাহিনীর অন্তত ২০টি হামলা প্রতিহত করেছে ইউক্রেনের সেনারা। বাখমুত ও শহরটি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমের আরেক শহর বুহলেদারে এসব হামলা প্রতিহত করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ও কিয়েভের মিত্ররা একজোট হয়ে শক্তি সঞ্চয়ের আগে রাশিয়া যত পারা যায় হামলা করে আরও অগ্রসরের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্যই তাড়াহুড়ো করে হামলা চালাচ্ছে তারা। যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ করে লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের পরিস্থিতি জটিল।
লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় পুরোটা এবং দোনেৎস্কের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া দক্ষিণের দুই অঞ্চল খেরসন ও জাপোরিজিঝিয়ারও বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা। গত বছর গণভোট করে এ চারটি অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক দেশ এর নিন্দা জানিয়েছিল।
অস্ত্র পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে এএফপি জানায়, রুশ বাহিনীর হামলার মুখে ইউক্রেনে প্রতিশ্রুত আরও অস্ত্রসরবরাহের ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার মার্কিন সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউক্রেনে সরবরাহের জন্য গোলা তৈরি করতে পৃথক দুই অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে ৫২ কোটি ২০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন করে এসব গোলাবারুদের সরবরাহ শুরু হবে আগামী মার্চ থেকে। গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার গোলা ছুড়ছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় বাহিনী ছুড়ছে চার থেকে সাত হাজার গোলা। কিয়েভে অস্ত্রসরবরাহের গতি বাড়াতে হবে।
ইইউর সদস্য হতে দৃশ্যমান অগ্রগতি
ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে ইউক্রেন। গতকাল এ কথা জানিয়েছেন, ইইউর প্রধান উরসুলা ভন ডার লায়েন। তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর আগ্রাসন মোকাবিলা ও যুদ্ধ চলমান থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ পেতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর ইইউয়ের সদস্যপদ পেতে জোর তৎপরতা শুরু করে দেয় ইউক্রেন। কিয়েভের চাওয়া, যতটা দ্রুত সম্ভব ইইউর সদস্য হতে হবে। একই সঙ্গে কিয়েভ চাচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের সদস্য হওয়ার আলোচনা যেন চলতি বছরই যতটা দ্রুত পারা যায়, শুরু করতে।
জাতিসংঘের আহ্বান
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের নাগরিকদের মানবিক সাহায্যের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, যুদ্ধের কারণে দেশে ও দেশের বাইরে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের সাহায্যের জন্য এ বছর ৫৬০ কোটি ডলার প্রয়োজন। এর মধ্যে ১৭০ কোটি প্রয়োজন ইউরোপে শরণার্থী হওয়া ইউক্রেনীয়দের জন্য।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ‘প্রতিদিন যুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে, ধ্বংসযজ্ঞ চলছে ও অনেকে গৃহহীন হচ্ছেন। এসব মানুষের সাহায্যের জন্য আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে।’