রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কেন কাজে লাগাতে পারছে না ইউক্রেন

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। এ অভিযানের দুই বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে কাল শনিবার। অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে লড়তে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তবে পশ্চিমা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ আনাতোলি মাতভিচুক।

কিন্তু কেন? এ বিষয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনাতোলির পর্যবেক্ষণ হলো, ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের ব্যবহারের টেকসই পরিকল্পনা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ব্যর্থ হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞ আনাতোলি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম স্পুতনিকের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কিয়েভকে স্বল্প মেয়াদে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র পাঠানোর আগে দুবার চিন্তা করে না বলে মনে করেন আনাতোলি।

পেন্টাগনের ইন্সপেক্টর জেনারেল রবার্ট স্টর্চের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর গত বছর ইউক্রেনকে ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকল, এম-১ আব্রামস ট্যাংক ও প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা ছাড়াই এগুলো ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেন।

অর্থাৎ এগুলো ইউক্রেন কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবে, কীভাবে মেরামত করবে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই। পরিকল্পনা না থাকায় ইউক্রেন এই অস্ত্রশস্ত্র জুতসইভাবে ব্যবহার করতে পারছে না।

রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ আনাতোলি বলেন, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বর্তমানে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরির জন্য কাজ করছে। তবে এ পরিকল্পনায় দূরদর্শিতার ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আনাতোলি বলেন, উল্লিখিত সামরিক সরঞ্জামগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনের ব্যর্থ হওয়ার ঘটনাটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি ডেকে আনবে।

উদাহরণ হিসেবে সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকার পতনের প্রসঙ্গ টানেন আনাতোলি।

কয়েক মাসের যুদ্ধের পর গত সপ্তাহে আভদিভকা শহরটি রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে যায়। এ ঘটনাকে মস্কোর জন্য একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ আনাতোলির ভাষ্যমতে, শহরটিতে ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকল কাজে আসেনি। এগুলো অগ্রসর হতে ব্যর্থ হয়েছিল।

আব্রামস ট্যাংক সম্পর্কে আনাতোলি বলেন, এগুলো নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের মধ্যে ভীতি আছে। এর ফলাফল স্পষ্ট। যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে রুশ বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় অগ্রসর হচ্ছে।

আভদিভকায় ব্র্যাডলি ও আব্রামসের ভূমিকা নিষ্ক্রয় ছিল বলে উল্লেখ করেন এই রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাখ্যা হলো, এই কম্পিউটারাইজড সামরিক হার্ডওয়্যারগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, রণক্ষেত্রে তা সক্রিয়ভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর প্রচেষ্টার দরকার পড়ে।

আনাতোলি বলেন, ইউক্রেনকে দেওয়া পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের খুচরা যন্ত্রাংশ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর ঘাটতির প্রসঙ্গ যখন সামনে আসে, তখন একটি বিষয় মনে রাখা উচিত, তা হলো—এই অস্ত্রগুলো স্পষ্টতই দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের জন্য নয়।

আনাতোলি মনে করেন, প্রয়োজন নেই—এমন সামরিক সরঞ্জামই কিয়েভকে সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়ার এই সামরিক বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতি ১২ ঘণ্টার অভিযান শেষে আব্রামস ট্যাংক পরিষ্কার করতে হয়। তা না হলে ইঞ্জিন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরো ইঞ্জিনই প্রতিস্থাপন করতে হয়। কিন্তু এটি এমন একটি কাজ, যা ইউক্রেনীয় বাহিনী নিজেরা করতে অক্ষম।

আনাতোলির কাছে স্পুতনিক জানতে চেয়েছিল, রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র কী করে ব্যয়বহুল এই অস্ত্রশস্ত্র ইউক্রেনে পাঠাল?

জবাবে আনাতোলি বলেন, পেন্টাগন প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে কথিত রক্ষণাবেক্ষণ পরিষেবা ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শস্য সরবরাহ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে পোল্যান্ডের বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধের জেরে পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়।