ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি

ইইউ নির্বাচন: সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে আরও শক্ত অবস্থানে ইতালির প্রধানমন্ত্রী

চার দিনের ভোট শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল আসতে শুরু করেছে। ইতালিতে প্রাথমিক গণনা বলছে, প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির কট্টর রক্ষণশীল দল ব্রাদার্স অব ইতালি এবার সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে চলেছে।

গত সপ্তাহে চার দিন ধরে ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। গতকাল রোববার ছিল ভোট গ্রহণের শেষ দিন। এবার ২১টি দেশের প্রায় ৩৫ কোটি ভোটার ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন।

ভোট গ্রহণ শেষে গতকালই প্রাথমিক গণনার ফলাফল আসতে শুরু করে।

প্রাথমিক গণনার ফল মেলোনির দলের জন্য সুখবর নিয়ে এলেও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার দ্য ক্রোর দলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। দলের দুরবস্থার আভাস পাওয়ার পরপরই ক্রো কান্নাভেজা চোখে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ঘোষণা দেন আগাম নির্বাচনের। মাখোঁর দল নাস্তানাবুদ হলেও ফ্রান্সের মেরিন লে পেনের ডানপন্থী ন্যাশনাল র‍্যালি দারুণ সাফল্য পেয়েছে।

ইতালিতে প্রাথমিক গণনার ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মেলোনির দল ব্রাদার্স অব ইতালি এবার সবচেয়ে বেশি ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেতে চলেছে, যা দলটির গতবারের (২০১৯) প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে প্রায় চার গুণ।

২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্রাদার্স অব ইতালি ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির ক্ষমতায় আসে। ব্রাদার্স অব ইতালির পর বিরোধী মধ্যডানপন্থী ডেমোক্রেটিক পার্টি ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং আরেক বিরোধী দল দ্য ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ১০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল।

ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁদের দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে চলেছে—এমন খবর জানার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মেলোনি বিজয়চিহ্ন দেখানো নিজের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘ধন্যবাদ!’

ইইউতে মেলোনির সাফল্য বলে দিচ্ছে, ২০২২ সালের তুলনায় দেশে মেলোনির ক্ষমতাসীন জোট সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ২০২২ সালে জোটের পক্ষে ৪৩ শতাংশের কিছু কম সমর্থন ছিল। এখন সেটা বেড়ে ৪৬ শতাংশের বেশি হয়েছে। মধ্যডানপন্থী থেকে কট্টর ডানপন্থী দল নিয়ে মেলোনি জোট সরকার গঠন করেছেন।

ওই জোটের অংশীদার ফোর্জা ইতালিয়া পার্টির নেতা সিনেটর লিসিয়া রনজুল্লি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই ভোট নিশ্চিতভাবেই সরকারকে আরও শক্তিশালী করতে চলেছে।’

ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ভোটের যে ফল পাওয়া গেছে, তাতে বলা যায়, শুধু মেলোনির দলই নয়, বরং কট্টর ডানপন্থী দলগুলো এবার বড় সাফল্য পেতে চলেছে, যা ইউরোপের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথে অনিশ্চয়তা যোগ করতে পারে।

বিশ্বজুড়ে ইইউ পার্লামেন্টকে ইউরোপীয় জাতিসত্তার আয়না বলা হয়ে থাকে। ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে কোনো দল থেকে ব্যক্তিবিশেষ সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। শুধু দলভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল ইইউ পার্লামেন্টের সম্ভাব্য সদস্য হওয়ার জন্য তালিকা তৈরি করে। যেকোনো দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী সদস্যপদ লাভ করে।

ইইউ পার্লামেন্টের সদস্য কোটা নির্ধারিত হয় দেশগুলোর লোকসংখ্যার অনুপাতে। সেই হিসাবে ৮ কোটি ৩৮ লাখ বাসিন্দার দেশ জার্মানির লোকসংখ্যার অনুপাতে সর্বোচ্চ আসনসংখ্যা ৯৬। ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।