ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে খেরসনের নোভা কাখোভকার জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ধ্বংসের পর নিপ্রো নদীর তীরে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানে থাকা ঘরবাড়িগুলোর ছাদ পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। প্লাবিত মানুষ জানিয়েছেন তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা।
প্লাবিত হয়েছে দিমিত্র মেলনিকভ নামের ৪৬ বছরের এক ব্যক্তির বাড়ি। পাঁচ সন্তান নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন মেলনিকভ। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর কোনো বাড়ি রইল না।’
মেয়ের হাত ধরে মেলনিকভ বলেন, এমনকি বাড়ির ছাদ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। পুরো এলাকাটিই পানির নিচে।
গত মঙ্গলবার ভোরে বাঁধটি ধ্বংস করার পর নিপ্রো নদীর উচ্চতা পাঁচ মিটার বেড়েছে। বাঁধটি ধ্বংসের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে দায়ী করেছে।
খেরসনের হাইড্রোমেট্রোলজিক্যাল সেন্টারের লরা মুসিয়ান পানি পরিমাপ করতে গিয়ে পড়ে আহত হন। তিনি বলেন, ‘পানি কমে যাবে এমন ভাবনায় অনেকে এলাকা ছেড়ে যাননি। কিন্তু তাঁরা শেষ পর্যন্ত কোনো সুখবর পাননি।’
স্থানীয় অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁতার কেটে এলাকা ছেড়েছেন। নাতালিয়া কোর্জ নামের ৬৮ বছরের এক ব্যক্তি বলেন, সাঁতার কেটে তিনি বাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে গিয়েছিলেন। তাঁর পায়ে আঘাত লেগেছিল। শীতে তিনি কাঁপছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়ির সব ঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আমার ফ্রিজ আলমারি সব পানিতে ভাসছে।’ পরে উদ্ধারকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। তবে বাড়িতে লালন–পালন করা কুকুর-বিড়ালদের উদ্ধার করতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন নাতালিয়া।
উদ্ধারকর্মীরা বৃদ্ধ, শিশু, পোষাপ্রাণীদের উদ্ধার করছেন। উদ্ধারকাজে নিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা সের্গেই বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের অবস্থান জানানোর পর আমরা তাঁদের উদ্ধার করতে যাই।’
স্টিভলানা আব্রামোভিচ নামের এক উদ্ধারকর্মী পাঁচতলা বাড়ি থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করেছেন। ওই বাড়ির একতলা পুরো প্লাবিত হয়েছে বলেন তিনি।
যাঁরা নিরাপদে পৌঁছেছেন, তাঁরা খুবই আনন্দিত ছিলেন। তবে অনেকেই ভীত ছিলেন এবং কাঁদছিলেন।
৪৫ বছরের তাতিয়ানা ইয়োয়েনকো বলেন, সকালেই কোনো পানি ছিল না। আর এখন এখানে আস্ত একটি নদী। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার পর্যন্ত এখানে কোনো নদী আছে বলে তিনি মনে করতে পারেননি। তিনি বলেন, বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।
নিপ্রো নদীতে নির্মিত সোভিয়েত আমলের বাঁধটি গত মঙ্গলবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাঁধটি ধ্বংসের জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে দায়ী করেছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের হিসাবমতে, বাঁধ ধ্বংসের জেরে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। এই সংখ্যা বাড়তে পারে।