স্পেনে পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১৫৮–এ পৌঁছেছে। হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ১ হাজার ২০০ জনের বেশি কর্মী ড্রোনের সাহায্যে ত্রাণ দিয়েছেন। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এখনো ঝুঁকির মুখে আছে দেশটির বিভিন্ন এলাকা।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, মানুষের জীবন বাঁচানো।’
কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে কিছু শহরে বন্যার ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় কাদা ও ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধারকাজ ফেলে রেখে চলে যান এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।
শুধু স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশেই বন্যায় অন্তত ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কাস্তিলা লা-মাঞ্চায় দুইজন এবং আন্দালুসিয়ায় ব্রিটিশ একজন নাগরিক মারা গেছেন। গতকাল ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশের পাইপোর্টা শহরে একটি নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। পানির স্রোতে ভেসে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মিগুয়েল গারিলা একজন ফার্মাসিস্ট। তাঁর ওষুধের দোকানটি বন্যায় ভেসে আসায় কাদায় ঢাকা পড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ না কেউ মারা গেছেন। এটি একটি দুঃস্বপ্ন।’
গতকাল বিবিসির প্রতিনিধি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখেছেন, উদ্ধারকারী ও শেষকৃত্যের গাড়িগুলো রাস্তা থেকে মরদেহগুলো সরিয়ে আনার কাজ করছে। বিভিন্ন সড়কে জলোচ্ছ্বাসের পানিতে গাড়িগুলো ভেসে গিয়ে একটির ওপর আরেকটি উঠে স্তূপ হয়ে গেছে।
গাড়ির চালকেরা জানিয়েছেন, স্রোতের তোড়ে ভেসে যাওয়া গাড়িতে আটকা পড়েছেন অনেকে। স্রোতে মহাসড়ক ও রাস্তাগুলো যেন নদীতে পরিণত হয়েছিল। বন্যায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া অনেক ব্যক্তির দাবি, তাঁরা গাছ কিংবা সেতু আঁকড়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
বন্যায় এ পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ, তা এখনো জানাতে পারেননি সরকারি কর্মকর্তারা। তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
স্পেনের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা এইমেটের তথ্যমতে, ভ্যালেন্সিয়ার পাশে চিভা শহরে আট ঘণ্টায় এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বে আরও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
দেশটির রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ সতর্ক করেছেন যে জরুরি অবস্থা এখনো শেষ হয়নি। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ।
ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে স্পেনের অন্য সব এলাকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বন্যায় হতাহত ব্যক্তিদের জন্য গতকাল থেকে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এ সময় সরকারি কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।