রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্যের রাজা হয়েছেন তাঁর ছেলে তৃতীয় চার্লস। তবে দায়িত্ব নিলেও এখনো আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়নি চার্লসের। আগামী ৬ মে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে বসবে চার্লসের অভিষেকের রাজকীয় আয়োজন। এ আয়োজনে চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলার মাথায় দেখা যাবে না কোহিনুর হীরাখচিত মুকুট।
বাকিংহাম প্রাসাদের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে কুইন কনসর্ট ক্যামিলা কোহিনুরখচিত মুকুট না পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর বদলে তিনি রানি মেরির ব্যবহৃত মুকুট পরবেন। এর অর্থ হলো, ওই মুকুটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসৃণ হীরার রেপ্লিকা থাকতে পারে। আসল কোহিনুর হীরাটি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মায়ের মুকুটে রয়েছে।
টাওয়ার অব লন্ডনে দর্শনার্থীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছিল রানি মেরির মুকুটটি। ৬ মের রাজকীয় অনুষ্ঠানের জন্য এখন মুকুটটি সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। করা হচ্ছে শেষ সময়ের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য রানি মেরির মুকুট বেছে নেওয়া হয়েছে।
রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, সিংহাসনে বসা রানিরা মাথায় পরেন কোহিনুরের মুকুট। ২০২২ সালের গোড়ার দিকে সদ্যপ্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর চার্লস সিংহাসনে বসলে নতুন রাজার স্ত্রী ক্যামিলা কোহিনুরখচিত রাজমুকুটের উত্তরাধিকারী হবেন।
কোহিনুর হীরা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ইতিহাসখ্যাত কোহিনুর হীরাটি ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেটের। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে এটি যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। ভারত সরকার ২০১৬ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল, যুক্তরাজ্য কোহিনুর হীরা চুরি করেনি অথবা জোর করেও নেয়নি। পাঞ্জাবের তৎকালীন মহারাজা রঞ্জিত সিংহের উত্তরাধিকারীরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এটি উপহার দিয়েছিলেন।
তবে ভারত সরকারের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) বলেছে, রানি ভিক্টোরিয়াকে কোহিনুর দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। লর্ড ডালহৌসি ও মহারাজা দুলিপ সিংহের মধ্যে ১৮৪৯ সালে লাহোর চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, লাহোরের মহারাজা ওই কোহিনুর হীরা ইংল্যান্ডের রানিকে দিতে বাধ্য হন।
বিভিন্ন সময় ঐতিহাসিক কোহিনুর হীরা ফেরত চেয়েছে ভারত। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরও ভারতীয়দের মধ্যে কোহিনুর ফেরতের বিষয়ে দাবি ওঠে। এ নিয়ে বিতর্কও দেখা দেয়। তবে কোহিনুরের বিষয়ে ভারত কিংবা যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।