স্বামী রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের নতুন কুইন কনসর্ট হন ক্যামিলা। রাজার সঙ্গে তিনিও নেন নতুন এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
রাজা চার্লস যখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শোক জানাচ্ছিলেন, তখন ক্যামিলা রাজার পাশেই ছিলেন এবং নিজের নতুন ভূমিকা গ্রহণ করেন। চার্লসের জীবনের ভালোবাসা তিনি। সেই সঙ্গে কয়েক দশকের পরামর্শদাতা ও বিশ্বস্ত সঙ্গী। ৬ মে ২৯তম কুইন কনসর্ট হিসেবে ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে তাঁর অভিষেক হবে।
চার্লস ও ক্যামিলা ২০০৫ সালে বিয়ে করেন। এর পর থেকেই রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে স্বামীর প্রতি সমর্থন জোগানো এবং নারী ও শিশুদের সহায়তার মাধ্যমে দাতব্যকাজে লেগে থেকে কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি।
কিন্তু এরপরও ব্রিটেনের কেউ কেউ এই দম্পতির দীর্ঘকাল ধরে চলা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং এর কারণে চার্লসের প্রথম স্ত্রী প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানার যন্ত্রণা ভোগের কথা ভুলে যাওয়া বা ক্ষমা করা কঠিন বলে মনে করেন।
নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘দ্য ক্রাউন’-এর সাম্প্রতিক সিজনগুলো সেই অস্থির সময়টাকে আবারও সামনে এনেছে। এর মাধ্যমে কিছু দর্শকের কাছে ক্যামিলাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অন্যদের তাঁর (ক্যামিলার) অতীত মনে করিয়ে দিয়েছে।
ক্যামিলার জন্ম ১৯৪৭ সালের জুলাই। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ক্যামিলা শ্যান্ড। তিনি গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছিলেন। সেখানেই ঘোড়ায় চড়ার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
যেভাবে চার্লসের সঙ্গে পরিচয়
জানা গেছে, ১৯৭০ সালে উইন্ডসরে একটি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় চার্লসের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ক্যামিলার। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। পরের বছর চার্লস রাজকীয় নৌবাহিনীতে (রয়্যাল নেভি) যোগ দেন। এ সময় নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে যখন তিনি দেশের বাইরে যান, ক্যামিলা অশ্বারোহী কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু পার্কার বোলসকে বিয়ে করেন। সত্তরের দশকে এই দম্পতির দুই সন্তান হয়।
এদিকে ১৯৮১ সালে ডায়ানা স্পেনসারকে বিয়ে করেন চার্লস। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল রূপকথার গল্পের মতো জাঁকজমকপূর্ণ, যা গোটা বিশ্বের লাখো মানুষ দেখেছেন। তবে চার্লস ১৯৯৪ সালে স্বীকার করেন, ক্যামিলার সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে।
পরের বছর বিবিসিকে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে ডায়ানাও চার্লসের এবং তাঁর নিজেরও বিশ্বাস ভঙ্গের কথা নিশ্চিত করেন। ক্যামিলার বিষয়টি ইঙ্গিত করে ডায়ানার বিখ্যাত উক্তিটি ছিল, ‘(চার্লসের সঙ্গে) বিয়েতে আমরা তিনজন ছিলাম। তাই বলা যায়, এটি কিছুটা ভঙ্গুরই ছিল।’
ক্যামিলা ও পার্কারের মধ্যে ১৯৯৫ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরের বছরই বিচ্ছেদ হয় চার্লস ও ডায়ানার। ডায়ানার প্রতি জনসাধারণ ও সংবাদমাধ্যমের সমর্থনের কারণে ক্যামিলা নিজেকে আড়ালে সরিয়ে নেন। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানার মৃত্যুর পর তাঁর প্রতি সহানুভূতির জোয়ার বয়ে গেলে ডায়ানাপন্থী ও ক্যামিলা-বিরোধী মনোভাব আরও বেড়ে যায়।
ক্যামিলার ফেরা
১৯৯৯ সালে রাজকীয় বাসভবন ক্ল্যারেন্স হাউস চার্লসের সঙ্গে ক্যামিলার প্রথম উপস্থিতি জনসাধারণের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে লন্ডনের রিটজ হোটেলের বাইরে খুবই পরিকল্পিতভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে সময় চার্লসের সঙ্গে থাকতে ক্যামিলা ওই হাউসে উঠেছিলেন। এর পর থেকে দাপ্তরিক কাগজপত্রে তাঁর নাম দেখা যায়।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্মতিতে ছয় বছর পর উইন্ডসরে দুজন যখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তাঁদের কয়েক দশকের প্রেম চূড়ান্ত পরিণতি পায়। ডাচেস অব কর্নওয়াল রাজকীয় পদবিতে ভূষিত হন ক্যামিলা। এভাবেই তাঁর যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ কুইন কনসর্ট হওয়ার পথ নিশ্চিত হয়।