অবৈধ অভিবাসী নিয়ে করা এক প্রশ্নে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টানায় অসন্তোষ বাড়ছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। এ নিয়ে লেবার পার্টি থেকে দেওয়া ব্যাখ্যার পরও অসন্তোষ কমছে না।
যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের প্রথম ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। এরপরও লেবার নেতা কেন বাংলাদেশকে দিয়ে উদাহরণ দিলেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এর জেরে লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ডেপুটি লিডার কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিন পদত্যাগ করেছেন।
এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টারস অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিবাদ জানিয়ে লেবার নেতাকে চিঠি লিখেছে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারারস অ্যাসোসিয়েশন ও ব্রিটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারারস অ্যাসোসিয়েশন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় ইস্ট লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রতিবাদ কর্মসূচিরও ডাক দেওয়া হয়।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুশনারা আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা স্টারমারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি প্রচার করছেন। লেবার পার্টিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।
স্টারমারের বক্তব্যের প্রতিবাদে অনেক বাংলাদেশি কাউন্সিলর লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলেও কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস নামের একটি ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্কিং অ্যান্ড ড্যাগেনহ্যাম কাউন্সিলের লেবার দলীয় কাউন্সিলর ফারুক চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন বলে একটি বার্তা দেওয়া হয়। এর সত্যতা যাচাইয়ে বার্কিং কাউন্সিলের মেয়র মইন কাদরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঘটনাটি সত্য নয় বলে তিনি প্রথম আলোকে জানান।
এদিকে, বৃহস্পতিবার একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু বলেননি বলে দাবি করেন লেবার নেতা স্টারমার। তিনি বলেন, ‘কাউকে উদ্দেশ্য করে বা কাউকে আঘাত করার জন্য আমি এমন মন্তব্য করিনি। যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটি ও লেবার পার্টির সম্পর্ক নিবিড়। আমার নিজের নির্বাচনী আসনেও বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে আমার সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।’
রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা ও সিলেটে ভ্রমণ করেছেন উল্লেখ করে স্টারমার বলেন, ‘বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্বেগকে আমি সমর্থন করছি। তবে আমি আবারও বলছি, কাউকে বা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’ লেবার পার্টি সরকার গঠন করলে আগামী দিনে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির প্রসঙ্গ টানেন। নির্বাচন সামনে রেখে গত সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে ওই উদাহরণ দেন তিনি।
অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে বর্তমান সরকারের ‘রুয়ান্ডা পলিসিকে’ ব্যয়বহুল উল্লেখ করে ক্ষমতায় গেলে এই নীতি বাতিলের ঘোষণা দেন স্টারমার। বিতর্ক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবে লেবার পার্টি। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির উদাহরণ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশির আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, যাঁরা অপরাধী এবং যাঁদের ভিসার বৈধ মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে, তাঁদেরকে ‘ফাস্ট- ট্র্যাক’ (দ্রুত) পদ্ধতিতে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য।