রাশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। এই সফরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অরবানের সমালোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা।
পুতিন রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের আলোচনা পুনরায় শুরু করতে এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অরবানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন অরবান।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ‘খোলাখুলি এবং কার্যকর’ আলোচনা করেছেন। ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়েও তাদের কথা হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে সম্প্রতি একটি রূপরেখা দিয়েছেন পুতিন। এ বিষয়ে যেকোনো আলোচনায় তাঁর সেই প্রস্তাব মূল আলোচ্য থাকবে বলে আবারও জোর দিয়ে বলেছেন এই নেতা। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চাইলেও কিয়েভের এখনো এ ধরনের কোনো ইচ্ছা নেই বলেও মনে করেন পুতিন।
সংবাদ সম্মেলনে অরবান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ‘অনেক কিছু’ করা প্রয়োজন।
অরবান আরও বলেন, ‘আলোচনা শুরু করতে আমরা প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছি। যদিও কিয়েভ এবং মস্কো মধ্যে এখনো অনেক অনেক মতপার্থক্য রয়েছে।’
রাশিয়ায় এই সফরে যাওয়ার কয়েক দিন আগে (গত মঙ্গলবার) হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অরবান প্রথমবারের মতো কিয়েভ ঘুরে এসেছেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন অরবান।
‘মস্কো সফরের বিষয়ে ইইউ থেকে অরবানকে কিছু বলা হয়নি। বরং হাঙ্গেরি ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর।’—জোসেপ বোরেল, ইইউর বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক প্রধান
সদস্যদেশের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সভাপতিত্ব বদলের অংশ হিসেবে এ মাসেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে হাঙ্গেরি। অরবান বলেছেন, তিনি এ সুযোগ ব্যবহার করে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে কাজ করতে চান।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অরবান এবার মস্কো সফরে গেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন। যদিও ইইউর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাঁর এই সফরের কড়া সমালোচনা করেছেন।
অরবানের সঙ্গে বৈঠকের আগে টেলিভিশনে পুতিন বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, এবার আপনি শুধু আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বের কারণেই আসছেন না, বরং কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসছেন।
তবে ইইউর বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, মস্কো সফরের বিষয়ে ইইউ থেকে অরবানকে কিছু বলা হয়নি। বরং ‘হাঙ্গেরি ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর হয়েছে।’
বিবৃতিতে বোরেল আরও বলেন, ‘হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কোনোভাবেই ইইউর প্রতিনিধিত্ব করছে না।’
অরবান বরাবরই পুতিন ঘনিষ্ঠ এবং তিনিই বর্তমানে পুতিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইইউ নেতা। ২৭ সদস্যের ইইউ থেকে ইউক্রেনের জন্য যেকোনো আর্থিক ও সামরিক সহায়তার প্রস্তাবে নিয়মিত বাধা দিয়ে আসছে হাঙ্গেরি। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রস্তাবেও সব সময় আপত্তি জানায় দেশটি।
অরবানের এই মস্কো সফর নিয়ে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে সতর্ক করে লিখেছেন, ‘খুশি রাখার কৌশল পুতিনকে থামাতে পারবে না। শুধু ঐক্য এবং সংকল্পই ইউক্রেনে একটি ব্যাপক, ন্যায়সংগত এবং স্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করবে।