ভ্লাদিমির পুতিন
ভ্লাদিমির পুতিন

ইউরোপ ‘অরক্ষিত’, শাসানি দিলেন পুতিন

ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করার পর পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে মস্কো বারবার কড়া বার্তা দিয়েছে। সরাসরি না হলেও স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে, যদি কেউ রাশিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে পরাজিত করার চেষ্টা করে, তবে তাকে বিপর্যয়কর পরিণতি ভোগ করতে হবে।

আর গতকাল শুক্রবার পুতিন দাবি করলেন, ইউক্রেনে জয়ী হতে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না।

সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের একটি প্যানেল আলোচনায় শুক্রবার পুতিনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ফোরামের বার্ষিক এ আয়োজন ‘রাশিয়ার দাভোস’ নামেও পরিচিত। 

সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় পুতিনকে দেখতে বেশ নিরীহ লেগেছে। এমনটা অবশ্য কমই দেখা যায়। সাধারণত সাক্ষাৎকার যিনি নেন, তাঁর তুলনায় পুতিন বরং কড়া থাকেন বেশি। 

তবে প্রশ্নকর্তা যদি হন জাঁদরেল রাশিয়ার বৈদেশিক নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সের্গেই কারাগানোভ, তবে এমনটিই হওয়ার কথা। 

গত বছর পুতিন আগাম পারমাণবিক আক্রমণের কথা বলেছিলেন। শুক্রবার তিনি ইউক্রেনের জেরে পশ্চিমের কপালে ‘পারমাণবিক পিস্তল’ ঠেকানোর আভাস দিলেন। 

সাক্ষাৎকারে পুতিন অবশ্য খুব বেশি কড়া ভাষা ব্যবহার করেননি। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ঠিক শান্তির কপোতও নন। 

ক্রেমলিনের নেতা বলেন, তিনি রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রসংক্রান্ত দিকনির্দেশনায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি একদমই উড়িয়ে দেননি। 

ওই নির্দেশনায় রাশিয়া কোন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, সে সম্পর্কে বলা আছে। 

পুতিন বলেন, ‘এ দিকনির্দেশনা পরিবর্তনযোগ্য এবং আমাদের চারপাশে বিশ্বে কী ঘটছে, সেটির ওপর আমরা খুব সতর্ক নজর রাখছি। এ নির্দেশনা পরিবর্তন করার বিষয়টি তাই বাতিল করে দেব না। এটা পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গেও সম্পর্কিত।’ 

যেসব ইউরোপীয় রাষ্ট্র ইউক্রেনকে সমর্থন করছে, তাদের জন্য এদিন সতর্কবার্তা দেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার যা আছে (কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র), ততটা ইউরোপ মহাদেশেরও নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি তার মজুত নিয়েও আসে, কুলাতে পারবে না।’ 

‘ইউরোপের কাছে উন্নত ব্যবস্থাও (আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার) নেই। সে হিসেবে বলতে গেলে, তারা কমবেশি অরক্ষিত’, আরও বলেন পুতিন। 

কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র হলো ছোট আকারের ‘যুদ্ধাস্ত্র’। সেগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তেজস্ক্রিয়তা না ছড়িয়ে শুধু নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করবে। 

এ সপ্তাহে অদ্ভুত এক সময় পার করেছে সেন্ট পিটার্সবার্গ। একদিকে সেখানে একটি বড় আন্তর্জাতিক ফোরাম চলেছে। মনে হচ্ছে, রাশিয়া পারস্পরিক সহযোগিতার বার্তা দিচ্ছে। যদিও স্পষ্টতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের তৃতীয় বছর চলছে এবং এ যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পড়া দেশ এখন রাশিয়া। রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে উত্তেজনার পারদও চড়ে চলেছে। 

সপ্তাহের শুরুতে সেন্ট পিটার্সবার্গে নানা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন পুতিন। সেখানে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন, পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে তৃতীয় পক্ষকেও উন্নত প্রযুক্তির দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে রাশিয়া। 

এদিকে ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দিতে চলেছে বলে জানা গেছে। যার জবাবে পুতিন এ বার্তা দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

পুতিন বলেন, ‘আমরা এখনো ওই অস্ত্র সরবরাহ শুরু করিনি। কিন্তু সামরিকসহ সুনির্দিষ্ট চাপের মধ্যে থাকা দেশ ও বৈধ সংস্থাগুলোর কাছে ওই সব অস্ত্র সরবরাহ করার অধিকার আমাদের রয়েছে। যারা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সেগুলো রাশিয়ার ভূখণ্ডের ওপর ব্যবহারে উৎসাহিত করে, তাদের চাপে রয়েছে ওই সব দেশ।’ 

এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু সাক্ষাৎকারে বলেননি পুতিন। এমনকি কোনো দেশের নামও উচ্চারণ করেননি।