ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের সেতুতে বিস্ফোরণের পেছনে কাদের হাত রয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে শনিবারের ওই বিস্ফোরণের পর উল্লাসে মেতেছেন ইউক্রেনের বাসিন্দারা। আনন্দ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিয়েভও। এর জেরে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, কিয়েভের এই প্রতিক্রিয়া তাদের ‘সন্ত্রাসী চরিত্রই’ তুলে ধরেছে।
সেতুতে বিস্ফোরণের জন্য এখনো ইউক্রেনকে সরাসরি দায়ী করেনি মস্কো। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক মনে করেন, এর পেছনে হাত রয়েছে রাশিয়ারই। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত বলছে, যে ট্রাকটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটি রাশিয়ার দিক থেকেই সেতুতে উঠেছিল। তাই দায়সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব রাশিয়ায় খোঁজা উচিত।
কারা এ বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, তার অনুসন্ধান করেছেন বিবিসির ইউক্রেন সংবাদদাতা পল এডামস। তিনি বলেন, বিস্ফোরণ ঘিরে বেশ কিছু আলোচনা সামনে আসছে। এটা ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, এমনকি আত্মঘাতী বোমা হামলাও হতে পারে।
এ নিয়ে পল এডামস কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনীর একজন সাবেক বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, এটি সুনিপুণ নাশকতার একটি দৃষ্টান্ত।
বিস্ফোরণের কারণ, পানির নিচ থেকে সুপরিকল্পিত হামলা হতে পারে। এমন কাঠামোগত ধ্বংসের পেছনে পরিকল্পনা থাকে একটি ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেওয়া।
সেতুতে বিস্ফোরণ নিয়ে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা স্পষ্ট কিছু বলছেন না। এ নিয়ে অনেকটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। গত আগস্টে ক্রিমিয়ার একটি বিমানঘাঁটিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেবারও একই আচরণ করেছিল ইউক্রেন।
তবে ওই বিমানঘাঁটিতে হামলার সঙ্গে এবারের সেতুতে হামলা একই প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করছেন পল এডামস। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে ব্যবহার করছে। এই হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার সেই সক্ষমতা খর্ব হবে। শনিবার যে সেতুটিতে হামলা হয়েছে, সেটি দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক রসদ পাঠানো হতো। তবে এখন তা মস্কোর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ সেতুর অক্ষত সড়কপথ দিয়ে স্বল্প পরিমাণ গাড়ি চলাচল শুরু করার কথা জানিয়েছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ট্রেন চলাচল চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। তবে ট্রাক ফেরিতে করে কার্চ প্রণালি পারাপার করতে বলা হয়েছে।
সিএনএন বলছে, এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত রুশ বাহিনীর সামরিক রসদের জোগান বাড়ানোর জন্য রাশিয়াকে হয় খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও ফেরি চালাতে হবে বা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য পরিবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। এতে আজভ সাগরের উপকূল দিয়ে মেলিতোপোল হয়ে আসা রেললাইনের ওপর আরও বেশি চাপ পড়বে।
এটা রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এই আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রে সক্ষমতার দুর্বলতার দিকগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। তাদের আরও বেশি রেললাইন দরকার ছিল।
ইউক্রেন ধীরে ধীরে খুব সতর্কতার সঙ্গে রুশ বাহিনীর রসদ সরবরাহের পথগুলোতে হামলা চালিয়েছে। প্রথমত, তারা ইজিয়াম দখলে নিয়েছে, যার কারণে খারকিভ থেকে রুশ বাহিনীকে পিছু হটতে হয়েছে। এরপর তারা লিমান শহর দখল করেছে, যেটা দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে অবস্থানরত রুশ বাহিনীর জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। আর এখন বিস্ফোরণ ঘটল কার্চ সেতুতে, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার শক্ত অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে।