লুকাশেঙ্কোর সতর্কবাণীকে পাত্তা দেননি প্রিগোশিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো। তা–ও একবার নয়, দুবার। প্রিগোশিনকে বেলারুশেই থাকতে বলেছিলেন লুকাশেঙ্কো। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র লুকাশেঙ্কোর এমন সতর্কবার্তায় গুরুত্ব দেননি প্রিগোশিন।

গতকাল শুক্রবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো নিজেই সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

লুকাশেঙ্কোর সতর্কবার্তায় কান না দেওয়ায় পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে প্রিগোশিনকে। গত বুধবার প্রিগোশিনের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ‘এমব্রেয়ার লিগেসি’ রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। মস্কো থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে টিভিয়ের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

উড়োজাহাজে ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিন, তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি উতকিনসহ সাতজন যাত্রী ও তিনজন ক্রু ছিলেন। তাঁরা সবাই নিহত হয়েছেন।
চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন প্রিগোশিন ও তাঁর ভাগনার গ্রুপের যোদ্ধারা। তবে রাশিয়ার সেনানেতৃত্বের প্রতি তাঁর অসন্তোষ ছিল। গত জুনের শেষের দিকে বিদ্রোহ করেন তিনি। ইউক্রেনের সীমান্ত এলাকা থেকে মস্কোর পথে রওনা দেন। যদিও মাঝপথে লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহের লাগাম টানেন একসময়ে পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রিগোশিন।

এ প্রসঙ্গে লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘বিদ্রোহের সময় আমি প্রিগোশিনকে সতর্ক করে বলেছিলাম, আপনি যদি মস্কোর দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে আপনার জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু প্রিগোশিন বলেছিলেন, ‘চুলোয় যাক—আমি মারা যাব।’
বিদ্রোহের লাগাম টানার পর লুকাশেঙ্কো ও তাঁর সহচর দিমিত্রি উতকিন বেলারুশে গিয়েছিলেন। ভাগনার যোদ্ধারাও রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যান। এ সময় লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে প্রিগোশিন ও উতকিন দেখা করেছিলেন।

লুকাশেঙ্কো জানান, ওই সময়ও প্রিগোশিন ও উতকিনকে তাঁদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রিগোশিন এই সতর্কবার্তাও উড়িয়ে দেন। তবে কবে, কখন, কোথায় তাঁদের মধ্যে এমন কথোপকথন হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি লুকাশেঙ্কো।

এখন উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রিগোশিনের মৃত্যুর পেছনে পুতিনের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র লুকাশেঙ্কো। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পুতিনকে চিনি। পুতিন খুব হিসাব করে চলেন। ভীষণ শান্ত আর ধীরস্থিরভাবে কাজ করতে পছন্দ করেন। আমি মনে করি না যে এর পেছনে পুতিন জড়িত থাকতে পারেন। পুতিনকে দোষারোপ করা খুবই রুক্ষ ও অপেশাদার মনোভাব।’

প্রিগোশিনের মৃত্যুর পরও ভাগনারের যোদ্ধারা বেলারুশে অবস্থান করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন লুকাশেঙ্কো।

এদিকে প্রিগোশিনকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ক্রেমলিন প্রিগোশিনকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা ‘ডাহা মিথ্যা’।
গতকাল এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, মর্মান্তিক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রিগোশিনের মৃত্যু নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। পশ্চিমে অবশ্যই এসব জল্পনা-কল্পনা একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এসেছে। এটা ডাহা মিথ্যা।