জাতিসংঘের কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ) জলবায়ু সম্মেলনের সংলাপ এখন আর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। জরুরি ভিত্তিতে এ সংলাপের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। জাতিসংঘের সাবেক এক মহাসচিব এবং সাবেক জলবায়ু প্রধানসহ শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেছেন।
জাতিসংঘকে লেখা এক চিঠিতে জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি সমর্থন করে না, এমন দেশগুলোর জলবায়ু সংলাপের আয়োজক হওয়া উচিত নয়।
এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন, জাতিসংঘের সাবেক জলবায়ুপ্রধান ক্রিশ্চিয়ানা ফিগারেস ও আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন।
গত সোমবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাস ‘সৃষ্টিকর্তার দেওয়া উপহার’। সেগুলো উত্তোলন করে বিক্রি করার জন্য তাঁকে দোষ দেওয়া উচিত নয়।
এর কয়েক দিন আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভাব্য জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠক আয়োজনে আজারবাইজানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাঁর ভূমিকা কাজে লাগিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সংলাপে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যদিও বাস্তবতা হলো, এ নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হলে প্রায় ২০০টি দেশের মধ্যে সর্বসম্মত ঐকমত্য হতে হবে।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সই হয়। এই চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি শতকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশগুলো।
এসব দেশ পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবং ২০৩০ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিন গুণ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
চিঠিতে এসব অর্জনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাক্ষরকারীরা। তবে তাঁরা মনে করছেন, দ্রুত ঘনীভূত হতে থাকা জলবায়ু সংকটের সঙ্গে কপ প্রক্রিয়ার এই শম্বুকগতি এর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্তমান কপ প্রক্রিয়া দ্রুত পরিবর্তন আনতে সক্ষম নয় কিংবা দেশগুলোকে পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করার সামর্থ্য রাখে না।
গত বছর দুবাইতে অনুষ্ঠিত কপ২৮ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার বিষয়ে একমত হয়। অথচ সম্মেলনের এক বছর পর দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্যাসগুলোর নিঃসরণ প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে।