রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

মস্কোর হুঁশিয়ারি

দেশের ভেতরে হামলা হলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কিয়েভকে তাদের অস্ত্র ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেওয়ার পর রাশিয়া তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। রাশিয়ার নিম্নকক্ষের প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান আন্দ্রেই কার্তাপোলভকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি আজ শুক্রবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন যদি রুশ ভূখণ্ডে আঘাত হানে, তবে মস্কো তার উপযুক্ত জবাব দেবে।

রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, রাশিয়া যখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলেছে, তখন কোনো ভাঁওতাবাজি করেনি। পশ্চিমের সঙ্গে  রাশিয়ার এই বিরোধ সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। অফিশিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেদভেদেভ বলেন, পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সংঘাত সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে এবং এটি যে শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক সংঘাতে গড়াবে না তা কেউ উড়িয়ে দিতে পারে না।

এর আগে গত মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছিলেন, ইউরোপের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলাতে উসকানি দিয়ে আগুন নিয়ে খেলছে। তিনি বলেন, এতে বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

তাসকেন্তে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, ‘ক্রমাগত উত্তেজনা বৃদ্ধি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কৌশলগত অস্ত্রের ক্ষেত্রে আমাদের সমতার কথা মাথায় রেখে, যদি এই গুরুতর পরিণতি ইউরোপে ঘটে, তবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে আচরণ করবে?’

পুতিন আরও বলেন, রাশিয়ায় ইউক্রেনকে আঘাত হানতে হলে তাদের পশ্চিমা কৃত্রিম উপগ্রহ, গোয়েন্দা ও সামরিক সহযোগিতা লাগবে। তাহলে পশ্চিমারা সরাসরি যুদ্ধে জড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনে ফ্রান্স সৈন্য পাঠালে তা বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

ইউরোপে ন্যাটো সদস্যদের বিষয়ে পুতিন বলেন, এসব ছোট দেশ কিসের সঙ্গে খেলছে, সে বিষয়ে তাদের সচেতন থাকা উচিত। তাদের মনে রাখতে হবে, তাদের স্থলভাগ অনেক ছোট এবং তা অধিক ঘনবসতিপূর্ণ। এটি এমন একটি বিষয়, যা তাদের রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত করার বিষয়ে কথা বলার আগে মনে রাখা উচিত।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করার ব্যাপারে ইউক্রেনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের যে বিধিনিষেধ ছিল, তা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে শুধু খারকিভ অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিতের স্বার্থেই এমনটা করা যাবে।

ড্রোন হামলার পর থেকে সেভাস্তোপলের ওই জ্বালানি সংরক্ষণাগারে আগুন জ্বলতে দেখা যায়

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, খারকিভ অঞ্চলে হামলার জবাবে পাল্টা হামলার জন্য ইউক্রেন যেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি তাঁর দলকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে যেন ইউক্রেন হামলাকারী বা হামলার প্রচেষ্টাকারী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানতে পারে।

নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি দ্বিতীয় এক মার্কিন কর্মকর্তাও রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত বুধবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাইডেন নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে পারেন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেন সফরে গিয়েছিলেন ব্লিঙ্কেন। বুধবার মলদোভায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্র পাল্টে যাওয়ায়’ সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

ন্যাটোর বৈঠককে সামনে রেখে জোটপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গও বারবার বলে আসছেন, সদস্যদেশগুলোর উচিত, রাশিয়ায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা আছে, তা পুনর্বিবেচনা করা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিমালা পরিবর্তনের পরপরই ইউক্রেনের খারকিভ শহরে রাশিয়ার বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। রাশিয়ায় হামলা চালাতে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির কয়েক ঘণ্টা পরই এ হামলা চালানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া জ্যাভলিন হাতে বিধ্বস্ত ট্যাংকের পাশে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনের এক সেনা

রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের কয়েকটি এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে। রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেতে জোরালো আহ্বান জানাচ্ছিল ইউক্রেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাতে সায় দেয়নি। তাদের আশঙ্কা, এতে মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ন্যাটো। তবে চলতি মাসে খারকিভ অঞ্চলে রুশ বাহিনী নতুন করে অভিযান শুরু করার পর এসব হিসাব–নিকাশ পাল্টে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

শান্তি সম্মেলনে যেতে অনীহা চীনের

সুইজারল্যান্ডে রাশিয়াকে বাদ দিয়েই একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করছে ইউক্রেন। এই সম্মেলনে চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিয়েভ। তবে গতকাল বেইজিং বলেছে, এ সম্মেলনে তাদের জন্য যোগ দেওয়া কঠিন। তাদের দাবি ছিল সম্মেলনে রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক, কিন্তু ইউক্রেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে। অপর দিকে রাশিয়া বলেছে, তাদের ছাড়া এ সম্মেলন আয়োজন অযৌক্তিক।

বন্দীদের যুদ্ধ করতে পাঠাচ্ছে ইউক্রেন

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে সেনা–ঘাটতিতে পড়েছে ইউক্রেন। তাই কারাগারে থাকা বন্দীদের যুদ্ধে পাঠাতে চাইছে দেশটি। ইতিমধ্যে চার হাজার বন্দী এর জন্য আবেদন করেছেন।