ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। রাশিয়ার গোলা ও রকেট হামলায় দেশটির অনেক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই ইউরোপের সবচেয়ে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এই দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামোও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বিপরীতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ রাশিয়া সামরিক বাজেট দ্বিগুণ করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিভিন্ন সময় কেবল নিজের শর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি থাকার কথা বলছেন। ইউক্রেনের মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তার বিষয়ে ‘যত দিন এটি লাগে’ এবং ‘যত দিন আমরা পারি’—এই দুই কথার মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
শক্তিধর রাশিয়ার বিরুদ্ধে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এরপরও দুই বছর ধরে রুশ বাহিনীর হামলার জবাবে ইউক্রেন বুক চিতিয়ে লড়াই করে চলেছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, চার কোটির বেশি জনসংখ্যার বিধ্বস্ত এই দেশটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দেশটির লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর একের পর এক ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ভবন ধ্বংস বন্ধ হচ্ছে। এই হামলা বন্ধ হওয়ার কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার দখলে যাওয়া সব অঞ্চল ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। দুই দেশের দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর সম্প্রতি ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকার দখল নিয়েছে রাশিয়া। একে দীর্ঘদিন পর বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে মস্কো। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতির পরামর্শক কমিটিতে থাকা সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা স্টিভেন মেয়ার্স বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে না মেলায় তা কমানো হয়েছে।
তবে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা ও বাইডেন প্রশাসন এখনই পিছিয়ে আসছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত সপ্তাহে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য সহায়তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিরাকিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো সিন ম্যাকফেট বলেন, রাশিয়া বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অবস্থায় রয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য উদ্বেগের মধ্যে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের আগ্রহ কমছে। তিনি আরও বলেন, চাপ নেওয়ার সক্ষমতায় রাশিয়ার সঙ্গে জিততে পারবে না ইউক্রেন। রাশিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিতেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ে দুই পক্ষই যখন এগিয়ে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। তবে হতাহতের সংখ্যা কোনো পক্ষই স্পষ্ট করে জানায়নি। সম্প্রতি মার্কিন সিনেটর রন জনসন দাবি করেন, যুদ্ধে ১ লাখ ২০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই লাখ সেনা। বিপরীতে ইউক্রেনের ৭০ হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। আহত সেনার সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারের মতো।