সমর্থন জোরদারে কিয়েভ সফরে ব্লিঙ্কেন, সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে (ডানে) স্বাগত জানান ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। ৬ সেপ্টেম্বর, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে
ছবি: এএফপি

ইউক্রেন সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। দুই দিনের সফরে আজ বুধবার দেশটির রাজধানী কিয়েভে পৌঁছান তিনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদারই এ সফরের লক্ষ্য।

এ ছাড়া এ সফরে ইউক্রেনের জন্য আরও ১০০ কোটির বেশি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেবেন তিনি। গত জুন থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ জোরদার করার পর এটাই মার্কিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার প্রথম ইউক্রেন সফর।

সফরকালে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে।  
দিমিত্র কুলেবার পাশে দাঁড়িয়ে ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেনের যা প্রয়োজন সেটা দেশটির কাছে আছে, এই বিষয় আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এটা শুধু দেশটির পাল্টা আক্রমণে সফল হওয়ার জন্য নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে দেশটির যা প্রয়োজন, সেটা নিশ্চিত করার জন্যও।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শক্তিশালী অর্থনীতি ও শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ার পথে এগিয়ে যেতে আমরা সব সময় তাদের পাশে রয়েছি।’

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শাণিয়েছে কিয়েভ। কয়েকটি গ্রাম ও এলাকা পুনর্দখল করে নিয়েছে। তবে রুশ অধিকৃত অঞ্চলগুলো দখলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ধীরগতিতে এগোচ্ছে ইউক্রেন। এর মধ্যে ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। এমনকি ব্লিঙ্কেনের সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে কিয়েভেও হামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পাল্টা আক্রমণের কৌশল যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হয়েছে এবং আগামী শীতের আগে ইউক্রেনের জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন কি না—এসব বিষয়ে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

ব্লিঙ্কেনের কিয়েভ সফর ও দেশটিকে সামরিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ বলেন, ‘শেষ ইউক্রেনিয়ান থাকা পর্যন্ত কিয়েভের যুদ্ধে অর্থায়ন করার বিষয়ে ওয়াশিংটন পরিকল্পনা করেছে।’

দিমিত্রি পেসকভ আরও বলেন, কিয়েভকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের গতিপথকে প্রভাবিত করবে না।

কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শুরুর আগে আজ ভোরে কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তবে লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সব ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলে দাবি দেশটির সামরিক প্রশাসনের।

টেলিগ্রাম পোস্টকে ইউক্রেনের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, কিয়েভে বেসামরিক মানুষ ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল রাশিয়া।

ভাগনার গ্রুপের আইনগত অস্তিত্ব নেই: রাশিয়া

ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের আইনগত কোনো অস্তিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভাগনার গ্রুপকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পেসকভ এমন মন্তব্য করেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইয়েভগেনি প্রিগোশিন ভাগনার গ্রুপের প্রধান ছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে সহায়তা দিয়েছিলেন ভাগনার যোদ্ধারা। তবে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পর ভাগনারপ্রধান পুতিনের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। ভাগনার যোদ্ধারা ইউরোপ ছেড়ে আফ্রিকায় পাড়ি জমান। গত আগস্টের শেষের দিকে রাশিয়ায় এক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রিগোশিন।

ভাগনারের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান বলেন, তারা সিরিয়া, লিবিয়াসহ আফ্রিকার বিশাল এলাকায় কাজ করেছে। এমনকি ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য রাশিয়ার কারাগার থেকে হাজার হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়ে ভাগনারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভাগনার হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কাজে যুক্ত। এই গোষ্ঠী বিদেশে ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিল।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। কেননা, বর্তমানে আইনগতভাবে ভাগনার বলে কোনো গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই।

রোমানিয়ার কাছাকাছি রুশ হামলা

এর আগে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রোমানিয়ার ভূখণ্ডে রুশ সামরিক ড্রোন অনুপ্রবেশ করেছে এবং বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছিল রোমানিয়া সরকার।

এ বিষয়ে রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস লোহানিস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁর দেশের ভূখণ্ডে রুশ ড্রোন প্রবেশ করেনি। ইউক্রেনের সঙ্গে রোমানিয়ার সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটারের কম দূরত্বে অভিযান চালানো হয়েছে।