ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন গত বৃহস্পতিবার। উত্তরাধিকার সূত্রে এখন সিংহাসনে বসবেন ছেলে প্রিন্স চার্লস। রানির মৃত্যুর পর ব্রিটিশ রাজপরিবার নিয়ে জানা যাচ্ছে নানা তথ্য। রানির জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। অন্যতম আলোচনা কোহিনূর নিয়ে।
দ্য মিন্ট ও দ্য ইকোনমিক টাইমের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরাটি নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। মহামূল্যবান, ঔজ্জ্বল্যময় হীরক খণ্ডের অধিকারী এককভাবেই ব্রিটিশ রাজপরিবার। এ মুহূর্তে তারা শোকাচ্ছন্ন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর মুকুটের কোহিনূরও যেন দ্যুতি হারিয়ে অনেকটাই ফিকে। শোকের আবহেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে, রানির মুকুটের কোহিনূর এবার কার মাথায় উঠবে?
রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, সিংহাসনে বসা রানিরা মাথায় পরেন কোহিনূরের মুকুট। সেই অনুযায়ী, কোহিনূর শোভা পেত এলিজাবেথের মাথায়। এলিজাবেথের ছেলে প্রিন্স চার্লস এবার হবেন কিং চার্লস। সে হিসেবে বিবাহসূত্রে রাজবধূ এবং ব্রিটেনের ভাবী রানি হতে যাচ্ছেন চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজা চার্লসের স্ত্রী হিসেবে রানি ক্যামিলার মাথায় উঠবে কোহিনূরের মুকুট।
আসলে এ বছরের গোড়ার দিকে সদ্য প্রয়াত রানি এলিজাবেথ ঘোষণা করেছিলেন, চালর্স সিংহাসনে বসলে ডাচেস অব কর্নওয়াল অর্থাৎ, চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা কোহিনূর মুকুটের উত্তরাধিকারী হবেন।
ইতিহাসখ্যাত কোহিনূর হীরাটির ওজন ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেট। ভারত সরকার ২০১৬ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল, যুক্তরাজ্য কোহিনূর হীরা চুরি করেনি অথবা জোর করে নেয়নি। তৎকালীন পাঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা মহারাজা রঞ্জিত সিংহের উত্তরাধিকারীরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। তবে সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্প্রতি দ্বিমত পোষণ করছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)। তারা বলছে, আসলে ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়াকে কোহিনূর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন লাহোরের মহারাজা। জনস্বার্থে করা এক মামলায় এর আগে সরকার বলেছিল, মহারাজা রঞ্জিত সিংহের উত্তরাধিকারীরা ‘অ্যাংলো-শিখ’ যুদ্ধের ‘ক্ষতিপূরণ হিসেবে’ যুক্তরাজ্যকে স্বেচ্ছায় এই কোহিনূর দিয়েছিলেন।
কোন কারণে কোহিনূর ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে গেল, সেই বিষয়টি জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে (আরটিআই) দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সম্প্রতি আবেদন করেন ভারতের অধিকারকর্মী রোহিত সাভারওয়াল। সেই আবেদনের জবাব থেকেই বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। রোহিতের প্রশ্ন ছিল, ভারতের কর্তৃপক্ষ কোহিনূর হীরা যুক্তরাজ্যকে উপহার দিয়েছিল, না এর পেছনে অন্য কারণ ছিল? জবাবে এএসআই বলেছে, লর্ড ডালহৌসি ও মহারাজা দুলিপ সিংহের মধ্যে ১৮৪৯ সালে লাহোর চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, লাহোরের মহারাজা ওই কোহিনূর হীরা ইংল্যান্ডের রানিকে দিতে বাধ্য হন।
এই চুক্তির সারমর্মও এএসআইয়ের জবাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই চুক্তি অনুযায়ী, কোহিনূর হীরা শাহ-সুজা-উল-মুলকের কাছ থেকে নেবেন মহারাজা রঞ্জিত সিংহ। তারপর সেটি ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে দিতে বাধ্য থাকবেন লাহোরের মহারাজা। এএসআই আরও জানিয়েছে, ওই চুক্তি থেকে দেখা যাচ্ছে, দুলিপ সিংহ ইচ্ছাকৃতভাবে কোহিনূর হীরা যুক্তরাজ্যকে দেননি।
এএসআইয়ের এই বক্তব্যকে সমর্থন দিয়েছেন মহারাজা দুলিপ সিংহ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও কবি গুরুভজন সিংহ গিল। গুরুভজন বলেছেন, তিনি এ কথাই দীর্ঘদিন ধরে বলার চেষ্টা করছেন।