রাশিয়ার অভ্যন্তরে কুরস্ক অঞ্চলে সামরিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটি বলেছে, ওই অঞ্চলে ৭৪টি বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ থেকে ৩ কিলোমিটার ভেতরে ইউক্রেনীয় সেনারা ঢুকে পড়েছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে কয়েক হাজার সেনার সমন্বয়ে বড় আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেন। সীমান্ত পেরিয়ে এ আক্রমণ শুরু করার পর রুশ ভূখণ্ডের এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি করেন ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার ওলেকসান্দর সিরস্কি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর দেশটির ভেতরে এ আক্রমণ কিয়েভের জন্য এখন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। রুশ অভিযানে এত দিন কোণঠাসা অবস্থায় ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর অব্যাহত সমর্থন পেয়ে আসা ইউক্রেন।
কিয়েভ কুরস্কে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার দাবি করলেও তা নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল অ্যাপতি আলাউদিনভ বলেছেন, ইউক্রেনীয় সেনাদের থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমান্তের ২৬ থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে কয়েকটি গ্রামে ইউক্রেনের সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভ বাহিনী রাশিয়ার সেনাদের আটক করেছে। রুশ বাহিনীর হাতে বন্দী ইউক্রেনীয় সেনাদের মুক্তির বিনিময়ে তাঁদের ছাড়া হতে পারে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘কঠিন ও তীব্র লড়াই সত্ত্বেও আমাদের বাহিনী কুরস্ক অঞ্চলে অগ্রযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বন্দী হওয়া রুশ সেনার সংখ্যাও বাড়ছে। কুরস্কের ৭৪টি বসতি এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে।’
এক ভিডিও লিঙ্কে দেখা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তাঁর শীর্ষ কমান্ডার ওলেকসান্দর সিরস্কিকে আক্রমণের পরবর্তী ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ শুরু করার নির্দেশ দিচ্ছেন। জবাবে সিরস্কি বলেন, ‘পরিকল্পনামাফিক সব চলছে।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
এদিকে কুরস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর আকস্মিক অভিযান শুরুর এক সপ্তাহ পর সেখানকার আঞ্চলিক গভর্নর অ্যালেক্সি স্মিরনভ স্থানীয় বাসিন্দাদের ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমি সোজাসাপ্টা বলতে চাই, সংকট এখনো কাটেনি।’
অন্যদিকে কড়া জবাব দিয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের কুরস্ক থেকে হটানোর অঙ্গীকার করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি কিয়েভের পশ্চিমা সমর্থকদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া কুরস্কে আক্রমণ শুরুর ঘটনায় কিয়েভের নিন্দা না জানানোয় জাতিসংঘে ইউক্রেনের মিত্রদের সমালোচনা করেছেন রুশ প্রতিনিধি।
কুরস্কে ইউক্রেনের অভিযান প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ অভিযান নিয়ে ওয়াশিংটন কিয়েভের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। যদিও এর আগে হোয়াইট হাউস বলেছে, এ অভিযানের পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি—কোনো পর্বেই ওয়াশিংটন যুক্ত নয়। আর বাইডেন বলেন, ‘এটা পুতিনের জন্য সত্যিকারের সংকট তৈরি করেছে।’