জর্জিয়ার রুশসমর্থিত বিচ্ছিন্ন অঞ্চল আবখাজিয়ার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। মস্কোর সঙ্গে একটি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করায় গতকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি জানান তাঁরা। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন এলাকায় ঢুকে বিক্ষোভ করেন।
আবখাজিয়ার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট আসলাম ভাজানিয়া বলেছেন, পদত্যাগ করার বা পালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তাঁর। বিরোধী নেতাদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা চলছে।
তবে বিরোধী নেতারা তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিরোধীরা আসলানের সঙ্গে আলোচনা করতে চান না।
রাশিয়া বলেছে, অঞ্চলটিতে চলমান সংকটময় পরিস্থিতি উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে দেশটি। রুশ নাগরিকদের আবখাজিয়ায় ভ্রমণ না করার অনুরোধও জানিয়েছে দেশটি।
২০০৮ সালে জর্জিয়ার দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল রাশিয়া। অঞ্চল দুটি হলো আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওসেটিয়া। রাশিয়া পাঁচ দিনব্যাপী এক যুদ্ধে জর্জিয়াকে পরাজিত করার পর এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। উভয় অঞ্চলে রাশিয়ার সেনাঘাঁটি রয়েছে। রাশিয়া এসব অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করে আসছে।
গতকাল আবখাজিয়ার রাজধানী সুখুমিতে পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশের লোহার ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অনেকে ভবনটির জানালার লোহার শিক ভেঙে দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে যান।
তেমুর গুলিয়া নামের এক বিরোধী নেতা বলেন, বিক্ষোভকারীরা প্রথম দিকে বিনিয়োগ চুক্তিটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন। তবে এখন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চান। এ চুক্তির অধীনে রাশিয়ার ধনী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা কৃষ্ণসাগরীয় অভিজাত অঞ্চলটিতে সম্পদ কেনার অনুমতি পাবেন। এর ফলে স্থানীয়দের জন্য সেখানে সম্পদের দাম অনেক বেড়ে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক কার্যালয়ের দরজা ভেঙে সেখানেও ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, এ ঘটনায় আহত ৯ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বার্তা পাঠানোর অ্যাপ টেলিগ্রামে আবখাজিয়ার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট আসলান ভাজানিয়া লিখেছেন, তিনি ও তাঁর নেতারা তাঁদের অবস্থানে অটল থাকবেন এবং নিজেদের কাজ চালিয়ে যাবেন। তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি আপনাদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করছি। আমি আবখাজিয়াতেই থাকব এবং আগের মতোই নিজের কাজ চালিয়ে যাব।’ বর্তমানে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
তবে বিরোধী কর্মী আখরা ভাজানিয়া প্রেসিডেন্টের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে রয়টার্সকে বলেন, ‘তিনি তাঁর বৈধতা হারিয়েছেন। তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় কিছুই বদলে হয়ে যায়নি।’
আসলান ভাজানিয়া একসময় আবখাজিয়ার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি সেখানকার প্রেসিডেন্ট হন।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে হামলার সময় আসলান তাঁর নিজ গ্রাম তামিশে অবস্থান করছিলেন।
আরেক বিরোধী নেতা ইসশু কাকালিয়া বলেছেন, আসলান ভাজানিয়া পদত্যাগ করতে রাজি হওয়ার আগপর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্টের দপ্তর ছেড়ে যাবেন না।
এদিকে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার সঙ্গে করা বিতর্কিত বিনিয়োগ চুক্তিটি বাতিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।