ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে কয়েক দিন বাদেই। তার আগে হঠাৎ করে আজ সোমবার কিয়েভ সফরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুদ্ধ যতদিন ধরেই চলুক না কেন ইউক্রেনের পাশে থাকবে ওয়াশিংটন।
বাইডেন কিয়েভে পৌঁছানোর পর শহরটিজুড়ে বেজে ওঠে সাইরেন। তবে এ সময় সেখানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনবাসীর সমর্থনে আপনার (বাইডেন) এই সফর খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি বার্তা।’
বাইডেন এমন সময়ে কিয়েভ সফর করলেন, যখন একদিন বাদেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ওই ভাষণে তিনি যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে রাশিয়ার লক্ষ্যগুলো তুলে ধরবেন।
এদিকে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেবেন বাইডেন। এ ছাড়া ইউক্রেনকে কামানের গোলা ও রাডারসহ নানা সমরাস্ত্র সরবরাহ করবেন তিনি। অস্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন জেলেনস্কিও। তাঁর ভাষ্যমতে, বাইডেনের সঙ্গে দূরপাল্লার অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁর।
বাইডেন এমন সময়ে কিয়েভ সফর করলেন, যখন একদিন বাদেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ভাষণে তিনি যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে রাশিয়ার লক্ষ্যগুলো তুলে ধরবেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করেছিল মস্কো।
গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন কিছু সফলতা পেয়েছে রুশ বাহিনী। তবে কিয়েভ ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা এটিকে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিতে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে পুতিন যে ইউক্রেনে জয় পাচ্ছেন তা দেখাতেই মরিয়া হয়ে এ অঞ্চলে লড়াই করছেন রুশ সেনারা।
এদিকে যুদ্ধের বর্ষপূতি ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে মস্কো। এর অংশ হিসেবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মস্কো সফরে যাচ্ছেন। যদিও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বেইজিং। তবে যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ আগেই দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সে সময় দুই দেশের শীর্ষ নেতারা বলেন, রাশিয়ার ওই ইউক্রেরের মধ্যে বন্ধুত্বের কোনো ‘সীমা নেই’।
এরই মধ্যে দিন কয়েক আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াশিংটন বলেছে, মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে বেইজিং। আর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েবিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চীনের কাছে কোনো কিছু দাবি করার অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র নেই। আর রাশিয়ার সঙ্গে তাঁদের ‘সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব’ স্বাধীন দুটি দেশের নিজেদের বিষয়।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাসের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে ক্রেমলিন। এ অঞ্চলের উত্তরে ক্রেমিনা থেকে দক্ষিণে ভুহলেদার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে তারা। কিছু কিছু এলাকায় সফলও হয়েছে। বলা যেতে পারে খনির শহর বাখমুতের আশপাশের এলাকাগুলো রুশ সেনাদের দখলে নেওয়ার কথাই।
জেলেনস্কি বলেন, ‘দনবাসে, ভুহলেদার, মারিনকা, ক্রেমিনায় রাশিয়া যত ক্ষতির মুখে পড়বে, তত দ্রুত আমরা ইউক্রেনের জয়ের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শেষ করতে পারব।’
তবে সামনের দিনগুলো নিয়ে আশাবাদী ইউক্রেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র পেতে যাচ্ছে দেশটি। ফলে ইউক্রেন এখন পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। উদ্দেশ রাশিয়ার বাহিনীকে চূড়ান্ত পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা।
এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই জটিল। আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা অনুপ্রবেশকারীদের (রুশ বাহিনী) কোমর ভেঙে দিচ্ছি। একই সঙ্গে রাশিয়াকে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি মুখে ফেলছি।’ জেলেনস্কি বলেন, ‘দনবাসে, ভুহলেদার, মারিনকা, ক্রেমিনায় রাশিয়া যত ক্ষতির মুখে পড়বে, তত দ্রুত আমরা ইউক্রেনের জয়ের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শেষ করতে পারব।’