সেতুর ক্ষতি দেখতে নামছে ডুবুরি, প্রতিশোধের কথা ভাবছে রাশিয়া

ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী সেতুতে শনিবার ট্রাক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে
ছবি: রয়টার্স

ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করা সেতুতে শক্তিশালী বিস্ফোরণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে পানির নিচে যাবেন ডুবুরিরা। গতকাল শনিবার ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ এ সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেতুটিকে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই রেল ও সড়ক সংযোগ কার্চ সেতু হিসেবেও পরিচিত। সেতুটি ২০১৮ সালে চালু হয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানে এটি মস্কোর প্রধান সরবরাহ রুট। খবর দ্য গার্ডিয়ানের

রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী মারাট খুশনুলিনকে উদ্ধৃত করে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, আজ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকেই ডুবুরিদের কাজ শুরু করার কথা। এ ছাড়া পানির ওপর থেকেও বিস্ফোরণের কারণ–সম্পর্কিত বিশদ জরিপকাজ আজকের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ক্রিমিয়ায় ক্রেমলিনের নিয়োগ করা গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এটা অপ্রীতিকর হলেও খুব বেশি মারাত্মক কিছু নয়। অবশ্য এ নিয়ে আবেগ কাজ করছে। এর প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছাও কাজ করছে।’

এর আগেও এ সেতুতে কোনো আক্রমণ হলে পাল্টাব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া। এদিকে সেতুতে ক্ষতির ঘটনায় ইউক্রেনের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কারণ, ক্রিমিয়া থেকে এখন ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে রুশ সেনাদের জন্য এ রেল ও সড়কসেতু ব্যবহার করে রসদ পাঠানো কঠিন হবে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আরও উত্তেজনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অবশ্য সেতুতে হামলার দায় সরাসরি স্বীকার করা হয়নি। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, একটি ট্রাক বোমা ব্যবহার করে এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা সেতু ধ্বংসের ছবি দিয়ে ‘শুভ জন্মদিন’ বার্তা দেওয়ার ঘটনায় এ বিস্ফোরণের পেছনে তাদের হাত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্মদিন।

আকসিওনভ বলেন, ক্রিমিয়ায় এক মাসের বেশি সময়ের জ্বালানি রয়েছে ও দুই মাসের খাবার রয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনে যুদ্ধরত তাদের সেনাদের কাছে সড়কপথ ও নৌপথে যথাযথভাবে রসদ পৌঁছাতে পারবেন।

এদিকে ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের স্থানীয় কর্মকর্তা আনাতোলি কুরতেভ এক টেলিগ্রাম বার্তায় বলেন, গতকাল রাতেই জাপোরিঝঝিয়া এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালান রুশ সেনারা। এতে ১৭ জন নিহত হন। এতে আবাসিক এলাকার ভবন ও রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আন্তোন গেরাসচেঙ্কো বলেন, হামলায় আহত হয়েছেন ৪০ জন। তবে এগুলো প্রাথমিক হিসাব।

এদিকে আজ রাশিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ১০ ঘণ্টা পর সেতুটিতে আবার হালকা যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। সেতুর রেলপথের অংশও সচল হয়েছে বলে মনে হয়েছে। বিস্ফোরণে একটি তেলবাহী ট্রেনেও আগুন ধরে গিয়েছিল।

এ সেতু ব্যবহার করে ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চল ও সেভাস্তোপোলের নৌবন্দরে সেনাদের রসদ সরবরাহ করা হয়। ক্রিমিয়ার গভর্নর বলেছেন, ‘শান্ত থাকুন। ভয় পাবেন না।’

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া নিজেদের অংশ ঘোষণা করে রাশিয়া। এরপর সেখানে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু তৈরি করে। কিয়েভের পক্ষ থেকে রুশ সেনাদের দ্রুত ইউক্রেনের দখল করা অঞ্চল ছাড়ার দাবি করা হয়েছে।

কার্চ সেতুর বিস্ফোরণের ঘটনাটি আক্রমণ কি না, তা এখনো পরিষ্কার না হলেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আক্রমণের ঘটনা রাশিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। গতকালই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ডিক্রি সই করে সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ও ক্রিমিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ লাইন অন্যতম। এ ছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পরে রাশিয়া ঘোষণা করেছে, তারা ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য সের্গেই সুরোভিকিন নামের এক অভিজ্ঞ কমান্ডারকে নিয়োগ দিয়েছে। ১৯৯০ ও ২০১৭ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।