শস্য নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধের জেরে ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সরবরাহ না করার ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর প্রথম দিন থেকেই কিয়েভকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে আসতে দেখা গেছে পোল্যান্ডকে। এমনকি তারা ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হয়ে ওঠে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কিয়েভের বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে পরিচিতি পায় পোল্যান্ড। এখন সেই পোল্যান্ডের কাছ থেকেই প্রতিবেশী ইউক্রেনে আর অস্ত্র না পাঠানোর ঘোষণা এল।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি গতকাল বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সরবরাহ না করার বিষয়ে তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
মোরাউইকি বলেন, ‘আমরা আর ইউক্রেনে অস্ত্র স্থানান্তর করছি না। কারণ, আমরা এখন পোল্যান্ডকে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করছি।’
পোল্যান্ড তার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ওয়ারশ ও কিয়েভের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়।
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ওয়ারশ-কিয়েভের মধ্যকার উত্তেজনা তীব্র রূপ ধারণ করে। শস্য বিতর্কের জেরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যেই কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে ঘোষণা দিল ওয়ারশ।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই ভাষণে তিনি অন্যান্য প্রসঙ্গের পাশাপাশি শস্য রপ্তানি নিয়েও কথা বলেন।
জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেন, শস্য রপ্তানি ইস্যুতে ইউরোপের কিছু দেশ এমন অবস্থান নিয়েছে, যা বাস্তবিক অর্থে রাশিয়াকেই সহায়তা করছে।
জেলেনস্কির মন্তব্যে পোলান্ড ক্ষুব্ধ হয়। শস্য ইস্যুতে পোল্যান্ডকে জেলেনস্কির অভিযুক্ত করার বিষয়টিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে ওয়ারশ নিন্দা জানায়।
জাতিসংঘে জেলেনস্কির মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মাথায় পোল্যান্ডে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ওয়ারশ।
শস্য বিতর্কের বিষয়টি নিয়ে মাতেউস মোরাউইকি গতকাল একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করছি।
কারণ, তারা যদি এভাবে বিরোধ বাড়াতে চায়, আমরা পোল্যান্ড থেকে আমদানির নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও পণ্য যুক্ত করব। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে না যে পোল্যান্ডের কৃষিশিল্পকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। আমরা পোলিশ কৃষকদের রক্ষা করছি।’
স্থানীয় কৃষকদের রক্ষায় গত মে মাসে পাঁচটি দেশে ইউক্রেনের শস্য আমদানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দেশগুলো হলো—পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়া।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ। তবে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে দেশ তিনটির বিরোধ তৈরি হয়েছে।