পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি গতকাল শনিবার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের কাছ থেকে শস্য ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য আমদানি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, স্থানীয় কৃষি খাতের সুরক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বাজারে এসব পণ্যের অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম পড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইউক্রেন হতাশা জানিয়ে বলেছে, একতরফাভাবে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপে পরিস্থিতির কোনো সুরাহা হবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশগুলোয় উৎপাদিত শস্যের চেয়ে ইউক্রেনে উৎপাদিত শস্য তুলনামূলক সস্তা। রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে কৃষ্ণসাগরের কিছু বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ ইউক্রেনীয় শস্য ইউরোপের মধ্যাঞ্চলের দেশগুলোর বাইরে যেতে পারছিল না। এতে এসব দেশে পণ্যের সরবরাহ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম কমে যেতে থাকে। আর তাতে স্থানীয় কৃষকদের ওপর এর প্রভাব পড়ে।
গত মাসে ইউরোপীয় কমিশনকে ইউরোপের ওই অঞ্চলের পাঁচটি দেশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, শস্য, তেলবীজ, ডিম, পোলট্রি ও চিনির মতো পণ্যগুলোর সরবরাহ ‘নজিরবিহীন’ মাত্রায় বেড়েছে। ইউক্রেনের কৃষিজাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এখন শুল্কের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
পোল্যান্ডে বছরটি নির্বাচনের বছর। আগে থেকেই সেখানে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলছে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত সরবরাহের বিষয়টি ক্ষমতাসীন দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টিকে (পিআইএস) দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
পিআইএসের নেতা জারোস্ল কাচজিনস্কি দলীয় এক সমাবেশে বলেন, আজ রোববার সরকার একটি বিধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আওতায় পোল্যান্ডে শস্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের প্রবেশ ও আমদানি নিষিদ্ধ হবে। শস্য থেকে শুরু করে মধু পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পণ্য এ তালিকায় থাকছে।
ইউক্রেনের খাদ্য ও কৃষিনীতিমালা–বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, পোল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞাটি দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান চুক্তির বিরোধী। ইস্যুটির সমাধানে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পোল্যান্ডের কৃষকেরা যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন, তা আমরা বুঝতে পারছি। তবে ইউক্রেনের কৃষকেরা এ মুহূর্তে যে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছেন, তার ওপর জোর দিচ্ছি আমরা।’
পরে হাঙ্গেরিও এ নিষেধাজ্ঞার কাতারে যোগ দেয়। তারাও বলে, স্থানীয় কৃষকদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
তবে ইউক্রেনের শস্য ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা কবে থেকে কার্যকর হবে, তা হাঙ্গেরি উল্লেখ করেনি। তারা বলছে, আগামী জুনের শেষ নাগাদ এর মেয়াদ শেষ হবে।
জারোস্ল কাচজিনস্কি বলেন, ‘একনিষ্ঠ বন্ধু ও মিত্র হয়ে আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি এবং থাকব। আমরা তাদের সমর্থন দেব। তবে নিজস্ব নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করাটা যেকোনো বিবেচনায় সব দেশের, প্রত্যেক কর্তৃপক্ষের, ভালো কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’
কাচজিনস্কি আরও বলেন, শস্যের ইস্যু নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে পোল্যান্ড প্রস্তুত আছে।
হাঙ্গেরি সরকার বলেছে, তাদের আশা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যায় থেকে বিধিতে পরিবর্তন আনা হবে। পাশাপাশি ইউক্রেনীয় পণ্যের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক বাদ দেওয়ার বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করতে হবে।