ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর ভেনিস পর্যটকদের কাছে যেন স্বর্গরাজ্য। ভেনিসজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য খাল। এসব খালের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় (স্থানীয়ভাবে গন্ডোলা নামে পরিচিত) চড়ে শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াতে ভেনিসে ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক। তবে ভেনিসের পুরোনো চিত্র এখন বদলে গেছে। খালগুলোয় পানি নেই। শুকিয়ে যাওয়া খালে কাদায় আটকে আছে নৌকা। পর্যটকদের কাছে যেন আকর্ষণ হারিয়েছে ভেনিস।
ভেনিসের খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ার বড় কারণ এবার বৃষ্টি ও তুষারপাত কম হওয়া। তবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতির পেছনে উচ্চচাপ, পূর্ণচন্দ্র, সমুদ্রস্রোতসহ কিছু কারণ রয়েছে। এ বিষয়ে ভেনিস সিটি কাউন্সিলের স্রোতসংক্রান্ত বিভাগে প্রধান আলভিস পাপা জানান, খরার কারণে হ্রদ ও নদীতে পানি কমে গেছে। ভূমধ্যসাগরে উচ্চচাপসহ এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাবে বৃষ্টি কম হচ্ছে। ভাটা প্রলম্বিত হচ্ছে।
প্রতিবছরই জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খালে পানি কমে আসা ও স্রোত না থাকার সমস্যায় ভোগে ভেনিস। তবে গত ১৬ বছরের মধ্যে এবারের মতো এত প্রকট সমস্যায় পড়তে হয়নি ভেনিসবাসীকে, বলছিলেন আলভিস পাপা।
ভেনিসজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নৌপথে পর্যটকবাহী নৌকার পাশাপাশি অসংখ্য ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করে। পানি না থাকায় এসব নৌযান চলতে পারছে না। শহরটির জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান পাওলো রোসি বলেন, ‘বেশির ভাগ জায়গায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। হেঁটে রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে।’
গত সপ্তাহে ভেনিসের খালগুলোয় পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৬ ফুট কম ছিল বলে জানান আলভিস পাপা। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
শতাধিক দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে ভেনিস। জালের মতো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা খালগুলো ঐতিহাসিক এ শহরের যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। ইউরোপিয়ান জিওসায়েন্সেস ইউনিয়নের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ভেনিস। সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ২১০০ সালের মধ্যে এই শহর পুরোপুরি সাগরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো রক্ষায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভেনিস বন্দর ও শহরের আশপাশে বড় বড় প্রমোদতরির আনাগোনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব জলযানের যাতায়াতের ফলে বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়। এসব ঢেউ ভেনিসের প্রাচীন স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করে। ক্ষতির কারণ হয়।