রাশিয়ায় গুচ্ছবোমা, ক্রিমিয়ায় ড্রোন হামলা

গুচ্ছ বোমার একটি অংশ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগরোদ অঞ্চলের একটি গ্রামে গুচ্ছবোমার (ক্লাস্টার বোমা) হামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবারের এ হামলায় কেউ হতাহত বা কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো গুচ্ছবোমা ইউক্রেনে এসে পৌঁছানোর পরই রাশিয়ার ভূখণ্ডে এ হামলার ঘটনা ঘটল।

বেলগরোদের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ আজ শনিবার বলেন, বেলগরোদের জুরাভলেভকা গ্রামে কামান ও রকেট ব্যবহার করে তিনটি গুচ্ছবোমা হামলা হয়েছে।

আজ শনিবার টেলিগ্রাম ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান গভর্নর গ্লাদকভ। তবে হামলা যে হয়েছে, এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তিনি দেখাননি। এদিকে কিয়েভও তাৎক্ষণিক এ হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

রাশিয়ার ভূখণ্ডে কোনো হামলার দায় এখনো স্বীকার করেনি ইউক্রেন এবং কিয়েভ দাবি করে আসছে, তারা আন্তসীমান্ত; অর্থাৎ ইউক্রেন সীমান্তের বাইরে কোনো হামলায় জড়িত নয়।

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগরোদ অঞ্চলে একাধিক হামলা হয়েছে। তবে রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী অঞ্চলটিতে নির্বিচারে এসব হামলা করে আসছে।

ইউক্রেনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালালে গত মে ও জুন মাসে বেলগরোদ অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছিল।

গুচ্ছবোমা মূলত অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা, যা লক্ষ্যবস্তুতে একসঙ্গে নিক্ষেপ করা হয়। গুচ্ছবোমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। এই বোমা অনেক সময় বিস্ফোরিত হয় না। অবিস্ফোরিত অবস্থায় বহু বছর মাটিতে পড়ে থাকে। পরে যেকোনো সময় নির্বিচার বিস্ফোরিত হয়। গুচ্ছবোমার ব্যবহারে বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঝুঁকি বেশি থাকায় ১২০টি দেশ এ বোমা নিষিদ্ধ করেছে।

মিত্রদেশগুলোর সমালোচনা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও সম্প্রতি ইউক্রেনকে গুচ্ছবোমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো গুচ্ছবোমা ইউক্রেনে পৌঁছায়। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি জানান, ইউক্রেন ‘কার্যকরভাবে’ গুচ্ছবোমার ব্যবহার শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গুচ্ছবোমা চাওয়ার সময় ইউক্রেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অধিক সংখ্যায় শত্রুসেনা থাকবে, শুধু এমন স্থানেই এ বোমা দিয়ে হামলা চালাবে তারা। ইউক্রেন এ-ও বলে আসছে, শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে; অর্থাৎ শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে এ বোমার ব্যবহার করা হবে।

ক্রিমিয়ায় ড্রোন হামলা

রুশ-নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে একটি গোলাবারুদের গুদামে ড্রোন হামলা হয়েছে। আজ শনিবার এ হামলার পর গুদামটির আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড সংযোগকারী কার্চ সেতুতে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়।

ক্রিমিয়ার গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ জানান, ক্রিমিয়ার ক্রান্সনোহভারদিস্কি এলাকার একটি গুদামে হামলা হয়েছে। এটি ছিল ড্রোন হামলা। ইউক্রেন এ হামলা করেছে। তবে হামলায় কেউ হতাহত বা কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।

পাঁচ দিন আগে চালকবিহীন নৌযান ব্যবহার করে কার্চ সেতুতে হামলা হয়। হামলায় এক দম্পতি নিহত হন। আহত হয় তাঁদের শিশুসন্তান। রাশিয়ার তখন বলেছিল, ইউক্রেন এ হামলা করছে। তবে হামলার ঘটনাকে স্বাগত জানালেও সরাসরি এর দায় স্বীকার করেনি কিয়েভ।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কার্চ সেতু ইউক্রেনের একটি লক্ষ্যবস্তু। আইনত এতে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, এই সেতু দিয়েই প্রতিদিন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে রাশিয়া। এই সেতু যুদ্ধের জন্য রসদ জোগান দিচ্ছে, কোনো শান্তি বয়ে আনছে না। ফলে এটা যে ইউক্রেনের একটি লক্ষ্যবস্তু হবে, তা অনুমেয়।

পোল্যান্ডকে সতর্ক করলেন পুতিন

বেলারুশ নিয়ে পোল্যান্ডকে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ড বেলারুশের ভূখণ্ড দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় যদি দেশটিতে হামলা চালায়, তাহলে তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রতিবেশী দেশ ও রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ কোনোভাবে আক্রান্ত হলে তার পাল্টা জবাব দেবে মস্কো। গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এসব কথা বলেন পুতিন।