ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের কিছু নথি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নথি ‘অতি গোপনীয়’। রয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র, তালিকা ও ছবি। যুদ্ধে ইউক্রেনকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সহায়তা করতে পারে, তার বিস্তারিত কৌশল বোঝা যায় এসব নথি থেকে। বোঝা যায় যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর প্রায় ১৪ মাস পর এসে প্রথমবারের মতো যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের কোনো নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটল। টুইটার ও টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়া এসব গোপন নথি অন্তত ছয় সপ্তাহ আগের। তবে সবচেয়ে সাম্প্রতিক নথিগুলোও গত ১ মার্চের।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের বরাতে সংবাদমাধ্যমের খবর, ফাঁস হওয়া এসব নথি আসল।
ছড়িয়ে পড়া নথিগুলোর অন্তত ২০টি পর্যবেক্ষণ করে বিবিসি জানিয়েছে, এতে ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম দেওয়া ও দেশটির সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিবরণ রয়েছে। এ ছাড়া রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এবারের বসন্তে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন, এমনটাই বলা রয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে।
নথিতে আরও দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র অনুমান করছে, চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ থেকে ২ লাখ ২৩ হাজার সেনা হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেনের দিক থেকে এ সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ থেকে ১ লাখ ৩১ হাজারের মধ্যে। তবে দুটি সংখ্যা নিয়ে পেন্টাগনের সংশয় রয়েছে। পেন্টাগন মনে করছে, এতে তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে।
এখন যে প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ, কে এসব গোপন নথি ফাঁস করল? কেনই-বা করল?
এ বিষয়ে তদন্তকারী ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বেলিংক্যাটের অ্যারিক টোলার বলেন, শুরুতে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকোর্ড থেকে ফোরচ্যান ও টেলিগ্রামে এসব নথি ছড়িয়ে পড়েছিল। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। গত মার্চের শুরুর দিকে কম্পিউটার গেমাররা এসব নথি দেখতে পান। তবে ফাঁস হওয়ার তথ্যের প্রকৃত উৎস সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
অ্যারিক টোলার আরও জানান, গত মার্চের শুরুর দিকে কম্পিউটার গেম মাইনক্রাফটের খেলোয়াড়েরা এসব নথি দেখতে পান। আলাপ-আলোচনা করেন। গত ৪ মার্চ একজন গেমার এমন ১০টি নথি পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, ‘এখানে কিছু ফাঁস হওয়া নথি আছে’।
গোপন নথি ফাঁসের প্রক্রিয়াটি ব্যতিক্রমী ও অপ্রচলিত। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে কিছু নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় রেডিট, ফোরচ্যানসহ একই ধরনের কয়েকটি ওয়েবসাইটে এসব নথি ফাঁস হয়েছিল।
তখন রেডিট কর্তৃপক্ষ জানায়, নথি ফাঁসের এসব ঘটনা রাশিয়া থেকে ঘটানো হয়েছিল। একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে গত বছর। ওই সময় কম্পিউটার গেম ওয়ার থান্ডারের খেলোয়াড়েরা ফাঁস হওয়া কিছু নথি নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। সেগুলো স্পর্শকাতর সামরিক নথি ছিল।
সর্বশেষ ফাঁস হওয়া সামরিক নথিগুলো আরও বেশি সংবেদনশীল। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন বেশ জটিল মুহূর্তে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে গোপন নথি ফাঁসের ঘটনা ইউক্রেনকে চাপে ফেলতে পারে। এ কারণে এবারের বসন্তে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের কৌশল বদলাতে হতে পারে কিয়েভকে।
যদিও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের দাবি, বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে এসব নথি ছড়িয়েছে। তবে কিছু সামরিক ব্লগারের দাবি, গোপন নথি ফাঁসের এ ঘটনা যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ কমান্ডারদের বিভ্রান্ত করার জন্য ‘পশ্চিমা চক্রান্তের’ অংশ। কেননা ইউক্রেনের সম্ভাব্য যুদ্ধকৌশল সম্পর্কে রুশ গোয়েন্দাদের না জানার কোনো কারণ নেই।