ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিকোলাইভে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর ফলে শহরের কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত মিকোলাইভে দুই পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। এর জেরে ‘নিজেদের জীবন বাঁচাতে’ মিকোলাইভ শহরের ৬০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী আলেকজান্ডার মেজিনোভ আজ সোমবার রয়টার্সকে বলেন, গতকাল রোববারের হামলার সময় তিনি তাঁর ঘরেই ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তিনি দ্রুত ভবন থেকে বের হয়ে আসতে যান। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় বেরোতে পারছিলেন না। এর এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে আরেকটি বিস্ফোরণে ফটকটি উড়ে যায়। তিনি দ্রুত ভবন থেকে বের হয়ে আসেন। পরপর হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় ওই আবাসিক ভবনের একাংশ।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়েছে, রোববার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার অন্তত ১২টি শাহেদ–১৩৬ ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এসব ড্রোন ইরানের তৈরি।
এদিকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু চলমান যুদ্ধের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এমনকি গত তিন দিনের মধ্যে দুবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন শোইগু।
এই বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা জোরদারে রাশিয়ার যেকোনো অজুহাত নাকচ করে দেওয়া হবে, এমন বার্তা শোইগুকে জানিয়ে দিয়েছেন অস্টিন।
চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন ডার্টি বোমার (তেজস্ক্রিয় উপাদানে সজ্জিত একটি বিস্ফোরকপূর্ণ বোমা) ব্যবহার করতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন শোইগু। গতকাল যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলার তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান। শোইগু বলেন, ‘ডার্টি বোমা ব্যবহারে কিয়েভের সম্ভাব্য উসকানি সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন।’ পরে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ও তিনি একই আশঙ্কার কথা জানান।
রাশিয়ার এই অভিযোগ নাকচ করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেন বলেছে, এটি অপ্রমাণিত দাবি। আসলে রাশিয়া নিজেই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এমন দাবির মানে হলো রাশিয়া নিজেই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে ডার্টি বোমা ব্যবহারের বিষয়ে রুশ অভিযোগ নাকচ করেছে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররাও। আজ এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স বলেছে, ‘আমরা রাশিয়ার এমন ভ্রান্ত অভিযোগ নাকচ করে দিচ্ছি। ইউক্রেন কখনোই নিজ ভূখণ্ডে এমন অস্ত্রের ব্যবহার করবে না।’
গ্যাসশিল্পে সহায়তা করতে রাশিয়ায় ৪০টি টারবাইন সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
ইরানের গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা নৌশাদি বলেছেন, গ্যাসশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা ও সরঞ্জামগুলোর ৮৫ শতাংশ ইরানের ভেতরে নির্মিত হয়। ইরান এ সক্ষমতার ভিত্তিতে তাদের তৈরি ৪০টি টারবাইন রাশিয়ায় রপ্তানি করতে চুক্তি সই করেছে। তবে কোথায় এ চুক্তি সই হয়েছে এবং কখন টারবাইন সরবরাহ করা হবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।