অভিবাসন আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে ফ্রান্সে বিক্ষোভ করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
অভিবাসন আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে ফ্রান্সে বিক্ষোভ করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

ফ্রান্সের পার্লামেন্টে বিতর্কিত অভিবাসন বিল পাস

ফ্রান্সের পার্লামেন্টে গতকাল মঙ্গলবার একটি অভিবাসন বিল পাস হয়েছে। এই বিলের প্রতি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সরকারের সমর্থন ছিল। যদিও নিজ দলের ভেতর থেকে অভিবাসন বিল নিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল মাখোঁকে।

এরপরও গতকাল ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে বিলটি পাস হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিলটি পাসে মারি লো পেনের কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালির (আরএন) সমর্থন ক্ষমতাসীনদের প্রয়োজন হয়নি।

পার্লামেন্টে বিলের খসড়া জমা দেওয়ার পর দেখা গেছে, অভিবাসন নীতি সংশোধন করে বিভিন্ন সময় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জটিল করা হয়েছে অভিবাসনপ্রক্রিয়া। বামপন্থী রাজনীতিকদের অভিযোগ, সরকার এ বিষয়ে কট্টর ডানপন্থীদের কাছে নতি স্বীকার করেছে।

পরিবর্তিত বিলটির প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন মারি লো পেন। তবে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর রেনেসাঁ পার্টি ও তাঁর রাজনৈতিক জোটভুক্ত বাম ঘরানার অনেকেই এ বিলটি সমর্থন না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদে তিন দফা নির্বাচনে লড়েছেন মারি লো পেন। পার্লামেন্টে তিনি আরএন দলের নেতা। ২০২৭ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেন। অভিবাসন বিল পাসের বিষয়ে মারি লো পেন বলেন, এটা আরএনের জন্য একটি আদর্শিক বিজয়। কেননা, এটা এখন জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এর আগে আরএন জানিয়েছিল, পার্লামেন্টে অভিবাসন বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন কিংবা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন দলটির আইনপ্রণেতারা।

গত সপ্তাহে ফরাসি পার্লামেন্টে কোনো বিতর্ক না করেই বিলটি বাতিল করা হয়। এটা মার্খোঁর জন্য বড় একটি ধাক্কা ছিল। তবে এর আগে উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি পাস হয়। এবার নিম্নকক্ষে ৩৪৯ থেকে ১৮৬ ভোটে বিলটি পাস হয়েছে।

রেনেসাঁ পার্টির বাম ঘরানার সংসদ সদস্য সাচা হউলি জানান, তিনি বিলের বিপক্ষে ভোট দেবেন। দলের আরও ৩০ জন মাখোঁপন্থী সংসদ সদস্যও এমনটা করবেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মাখোঁ পার্লামেন্টের ভোটাভুটির আগে এলিসি প্রাসাদে ক্ষমতাসীন দলের জরুরি বৈঠক ডাকেন।

তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। মাখোঁ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ও আবাসনমন্ত্রী ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নির সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের হুমকি দেন।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন গত রোববার সতর্ক করে বলেন, পার্লামেন্টে অভিবাসন বিল পাস না হলে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মেরি লো পেনের জয়ী হওয়ার ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে।

তবে এখন বিলটি পাস হয়ে যাওয়ায় মাখোঁ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা আদৌ পদত্যাগ করবেন কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ।

কী আছে বিলে

চলতি মাসের শুরুর দিকে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফ্রান্সের নতুন অভিবাসন বিলে কী আছে, তা এখনো সম্পূর্ণ জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য অনুযায়ী, আইনে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে আপিলের জন্য অপেক্ষার সময়ও কমিয়ে আনা হবে। পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসা (ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা) প্রক্রিয়াও কঠিন করে তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ ফ্রান্সে পরিবারের কোনো সদস্য থাকলে তাঁর পক্ষে অভিবাসন পাওয়া নতুন আইনে আগের চেয়ে জটিল হতে পারে।

এ ছাড়া ফ্রান্সে চিকিৎসার জন্য আসার রাস্তাও কঠিন করা হচ্ছে। আগে ১৩ বছরের কম বয়সীদের ফেরত পাঠানো হতো না। এবার সেই আইনেও পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে।