যুক্তরাজ্যে স্কুল, হাসপাতাল ও খেলার মাঠের বাইরে খোলা স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্য সরকার।
রাষ্ট্র পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) ওপর চাপ কমানোসহ করদাতাদের খরচ লাঘবের উপায় হিসেবে যুক্তরাজ্য সরকার এমন পরিকল্পনা করছে।
আজ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত ‘টোব্যাকো অ্যান্ড ভেপস বিল’ উত্থাপন করবে যুক্তরাজ্য সরকার।
পার্লামেন্টে উপস্থাপিত হতে যাওয়া এই বিলে কম বয়সীদের ধূমপান নিষিদ্ধ করাসহ বিশ্বের কঠোরতর কিছু ধূমপানবিরোধী বিধিনিষেধ থাকছে।
তবে আতিথেয়তা শিল্পের (হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি) ওপর প্রভাব পড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশের পরে সরকার পানশালা ও ক্যাফের বাইরে ধূমপান নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করার জন্য তাঁরা যদি পদক্ষেপ না নেন, তাহলে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) রোগীদের ক্রমবর্ধমান ভিড় সামলাতে হিমশিম খাবে, সর্বস্বান্ত হবে। ঐতিহাসিক এই বিল হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত আগস্টে বলেছিলেন, পানশালা বাগানের (পাব গার্ডেন) মতো বাইরের খোলা স্থানগুলোতে ধূমপান নিষিদ্ধ করার ধারণাটিকে তিনি সমর্থন করেন।
তবে ব্রিটিশ বিয়ার অ্যান্ড পাব অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পরিকল্পনাটিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করা হয়। তারা বলে, এমনিতেই ক্রমবর্ধমান খরচ সামলাতে এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তার প্রভাব ‘খুবই মারাত্মক’ হবে।
গত সেপ্টেম্বরে ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের তিন-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ হাসপাতালের বাইরের স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করেন। তবে পানশালার বাগানে (পাব গার্ডেন) ধূমপান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জরিপে দ্বিধাবিভক্ত মত উঠে আসে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, নতুন আইনটি হলে তারা শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল ও হাসপাতালের মতো আবদ্ধ জায়গার বাইরে সুনির্দিষ্ট খোলা স্থানগুলোয় ধূমপান নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পাবে। তবে পরিকল্পনাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হবে।
যুক্তরাজ্যে প্রথম ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আগের কনজারভেটিভ পার্টির সরকার একই রকম পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে গত গ্রীষ্মে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হারায়। এ কারণে দলটি তার পরিকল্পনা আর আইনে পরিণত করতে পারেনি।
নতুন বিলটি আইনে পরিণত হলে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে যাদের বয়স ২০২৪ সালে ১৫ বছর হয়েছে কিংবা তার চেয়ে কম, তাদের সিগারেট কেনায় নিষেধাজ্ঞা থাকবে। শিশুদের কাছে ই-সিগারেটের আবেদন কমিয়ে আনাটাও এই বিলের লক্ষ্য।
যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, ধূমপানের কারণে দেশটিতে বছরে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ধূমপানে উৎপাদনশীলতা কমে। এ জন্য যুক্তরাজ্যকে বছরে অর্থনৈতিকভাবে ২ হাজার ১৮০ কোটি পাউন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা খাতে এত বেশি পরিমাণ খরচ হয়, যা প্রাপ্ত করের চেয়ে অনেক বেশি।
২০০৭ সালে পানশালা (বার), কর্মস্থলসহ প্রায় সব আবদ্ধ স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্য। ক্যানসার রিসার্চ ইউকের হিসাব অনুসারে, এই পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা ১৯ লাখ কমেছে।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, পরের বছর যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জন কমে গেছে।