এবারও কি ‘মৃত’ প্রিগোশিন ফিরে আসবেন

ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন
ছবি: রয়টার্স  

রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন গত বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়া এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি।

প্রিগোশিনকে বহনকারী উড়োজাহাজের মদের বক্সে বোমা পুতে রাখা ছিল? এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দিয়ে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে? নিজেই মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়াচ্ছেন? উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রিগোশিনের মৃত্যু নিয়ে এমনই নানা প্রশ্ন উঠছে, দানা বাঁধছে রহস্য।

দুই মাস আগে প্রিগোশিনের নেতৃত্বে স্বল্পস্থায়ী ব্যর্থ অভুত্থান বেশ বিচলিত করে তুলেছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। এমনকি গত বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন ভাষণে সেই তিনিই আবার ভাগনারপ্রধানের ‘মুত্যুতে’ তাঁর পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। পুতিন বলেছিলেন, ‘ভাগনারপ্রধান একজন মেধাবি মানুষ ছিলেন, তবে তিনি কিছু ভুল করেছেন।’

ইতিহাস যদি তার আপন গতিতে চলে, তাহলে প্রিগোশিনের মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে গেলে আমাদের দুবার ভাবতে হতে পারে। কিন্তু কেন? অতীতের একটি ঘটনার দিকে তাকালে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে। কারণ, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রিগোশিন ‘নিহত’ হয়েছেন, এমন খবর এবারই প্রথম বের হয়নি।

২০১৯ সালে আরেকবার খবর বেরিয়েছিল, আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিন নিহত হয়েছেন। ওই সময় তাঁর সঙ্গে বিমানে আরও আটজন আরোহী ছিলেন। সেই সময় মাত্র তিন দিনের মধ্যে তিনি আবার সুস্থ ও ‘জীবিত’ অবস্থায় ফিরে এসেছেন।

প্রিগোশিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজের মালিক তিনি ঠিকই। তবে ভাগনারপ্রধান সাধারণত নিজের উড়োজাহাজে না চড়ে অন্য উড়োজাহাজে চড়ে থাকেন বেশি।

লন্ডনভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান চাথাম হাউসের কির গাইলস সতর্ক করে বলেছেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের আরোহীর তালিকায় একজনের নাম ইয়েভগেনি প্রিগোশিন থাকলেও তিনিই যে আসল ভাগনারপ্রধান, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, একটা কথা প্রচলিত আছে, তাঁর সফর নিয়ে অন্যদের মধ্যে, বিশেষ করে শত্রুদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে সহকর্মীদের কেউ কেউ নিজের নাম পরিবর্তন করে ইয়েভগেনি প্রিগোশিন সেজে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেন।

অধিকন্তু, ইতিমধ্যে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে, যে অঞ্চলে ভাগনারের মালিকানাধীন উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই অঞ্চলে ফ্লাইট রাডারে আরেকটি উড়োজাহাজ ধরা পড়েছে, যা আঁকাবাঁকাভাবে আকাশে উড়ছিল।

ফ্লাইট ডেটার উল্লেখ করে অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে, ভাগনারের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই দ্বিতীয় উড়োজাহাজটি মস্কোয় ফিরে আসে।

যদিও রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০ আরোহীর মধ্যে ভাগনারপ্রধানও রয়েছেন। কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়ের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নিশ্চিত করে জানায়নি তারা।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল শুক্রবার বলেছে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে ভাগনারপ্রধান যে ছিলেন, এখনো এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। তবে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘খুব সম্ভবত’ তিনি মারা গেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, প্রিগোশিন ‘খুব সম্ভবত’ উড়োজাহাজে ছিলেন।

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, বিস্ফোরণের কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং এই বিস্ফোরণ কেউ না কেউ ঘটিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা প্রাথমিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে বলেছেন, তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, ‘খুব সম্ভবত’ উড়োজাহাজে এ বিস্ফোরণের মূল লক্ষ্য ছিলেন ইয়েভগেনি প্রিগোশিন। আর এই বিস্ফোরণের সঙ্গে পুতিনের ‘সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার দীর্ঘদিনের ইতিহাসের’ সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে।