পিএম শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, অন্য কিছুও হতে পারে

ঋষি সুনাক, পেনি মরড্যান্ট
ঋষি সুনাক, পেনি মরড্যান্ট

ব্রিটেনে ডাউনিং স্ট্রিটে বরিস জনসনের উত্তরাধিকারী কে হবেন, তা নিয়ে প্রাথমিক যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের ভোটে এগিয়ে আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। কিন্তু সদস্যদের পছন্দের শীর্ষে আছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
পেনি মরড্যান্ট।

এই প্রবণতা অপরিবর্তিত থাকলে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের কথাই সত্য হবে বলে মনে হচ্ছে। আর তা হলে ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ডটি হবে না। সম্ভবত কোনো পুরুষই প্রধানমন্ত্রীর পদে ফিরবেন না। যে রেকর্ড হবে, তা হলো ব্রিটেন তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী পাবে এবং তা-ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে।

আগের দুজন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ও থেরেসা মেও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ছিলেন। তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হবেন পেনি মরড্যান্ট। সাবেক এই নারী নৌসেনা রাজনীতিতে আসার আগে জাদুকরের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। রাজনীতির জাদুতে ভবিষ্যতে পিএম মানে শুধু প্রধানমন্ত্রী (প্রাইম মিনিস্টার) নয়, পেনি মরড্যান্টও বুঝতে হতে পারে।

যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন পাবেন, তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা চালু থাকলেও ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলোতে দলের নেতারাই প্রধানমন্ত্রী হন এবং দলের নেতা নির্বাচন করেন সাধারণ সদস্যরা।

তবে এমপি নন, এমন কেউ দলের নেতা হতে পারেন না। কনজারভেটিভ পার্টির দলীয় বিধি অনুযায়ী এমপিরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজটা সম্পন্ন করেন এবং সাধারণ সদস্যদের ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুজনে নামিয়ে আনেন। এই বাছাইপ্রক্রিয়া এবং এমপিদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় মন্ত্রীদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুরোটাই সাধারণ এমপিদের হাতে, যাঁদের ব্যাকবেঞ্চার বলা হয়। তাঁদের একটি কমিটি আছে, যা ১৯২২ কমিটি নামে পরিচিত।

এই ১৯২২ কমিটি এবার ঠিক করেছিল, অন্তত ১৫ জন এমপির সমর্থন ছাড়া কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। এরপর পালাক্রমে অন্য এমপিরা ভোট দিয়ে কম ভোট পাওয়াদের বাদ দিতে দিতে শেষ দুজনকে দলের সাধারণ সদস্যদের কাছে তুলে ধরবেন।

গত বুধবার প্রথম দফা ভোটে ২০টির কম ভোট পাওয়ায় বাদ পড়ে যান বরিসের পতন ত্বরান্বিত করার পালায় প্রথম পদত্যাগকারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। আরও বাদ পড়েন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট এবং বরিস মন্ত্রিসভার সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাউয়ি। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা ভোটে কমপক্ষে ৩০ জনের সমর্থন প্রয়োজন বলে পূর্বনির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ঝরে পড়েন বরিস জনসনের প্রতি শেষ পর্যন্ত অনুগত থাকা অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা বেভারম্যান।

তিনি ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সবচেয়ে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী। তিনি নারী ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীরও প্রতিনিধি ছিলেন। প্রতিযোগিতা থেকে এত তাড়াতাড়ি তাঁর বিদায় ইঙ্গিত দেয়, ভোটের হিসাব-নিকাশ খুব সোজাসাপটা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এমপিদের ভোটে এগিয়ে থাকা ঋষি সুনাকের বিপরীতে বরিস-ঘনিষ্ঠরা বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সম্ভাবনা বেশি দেখছেন।

দ্বিতীয় দফা ভোটে অবশ্য লিজ ট্রাস আশানুরূপ সাফল্য পাননি। তাঁর ভোট সামান্য বেড়েছে, অথচ ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় দলের কট্টর ডানপন্থীদের সমর্থন আদায় করতে পারবেন। বরিস জনসনের ঘনিষ্ঠরা এখন চেষ্টা করছেন লিজ ট্রাসের পক্ষে হাওয়া তোলার।

এই পর্বে ঋষি সুনাক ১০১ ভোট পেয়ে প্রথম এবং ৮৩ ভোট পেয়ে পেনি মরড্যান্ট আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে বরিস-সমর্থকেরা ঋষি ও পেনি দুজনকেই ঠেকানোর চেষ্টায় আছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মধ্যে পরিচালিত ইউগভের মতামত জরিপ বলছে, পেনি মরড্যান্ট ঋষি সুনাকের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পাবেন। এখন টিকে থাকা পাঁচজনের অপর চারজনের প্রত্যেকের বিপক্ষেই দলের সদস্যরা পেনি মরড্যান্টকে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভোটে নির্বাচিত করতে আগ্রহী।

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকা অন্য দুজন কেমি বেডনক ও টম টুগেনহাট রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নতুন। টম টুগেনহাট কখনো সরকারের কোনো পদে ছিলেন না, তবে পররাষ্ট্রবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারের ওপর তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সততা এবং জনগণের আস্থা অর্জনকেই তিনি তাঁর প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে তুলে ধরেছেন। এঁদের প্রত্যেকেই এখন আশা করছেন, টিভি বিতর্কে তাঁরা নিজেদের অবস্থান যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারলে দলীয় সদস্যদের মন জয় করা সম্ভব হবে। আগামী সোমবার পর্যন্ত তিনটি টিভি বিতর্ক হওয়ার কথা।

প্রার্থীদের অতীত ও ব্যক্তিগত জীবন এখন সবার নজরে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর হয়ে উঠতে পারে ঋষির ব্যক্তিজীবন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতা মূর্তির স্বামী পরিচয়ের জন্যও তাঁকে বাড়তি প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে ৭৩ কোটি পাউন্ডের (প্রায় শতকোটি ডলার) মালিক। ব্যক্তিজীবনে বিনিয়োগ ব্যাংকে চাকরির সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় তিনি গ্রিনকার্ড নেন এবং মাত্র বছর কয়েক আগে সমালোচনার মুখে তা পরিত্যাগ করেন।

তাঁর স্ত্রী ভারতীয় নাগরিকত্বের কারণে অনিবাসী হিসেবে যুক্তরাজ্যের বাইরের আয় ও সম্পদের ওপর কর অব্যাহতির সুবিধা নেওয়ায় গত বছর বেশ সমালোচিত হন। পরে তাঁর স্ত্রী তখন থেকে সব আয়ের কর ব্রিটেনে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।