ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণার পর জনগণের উল্লাস
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণার পর জনগণের উল্লাস

ফ্রান্সের নির্বাচনে জয়ী বাম জোট, হতে পারে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপে এগিয়ে থাকা উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালিকে (আরএন) দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ঠেকিয়ে দিয়েছে বামপন্থী জোট।

আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণায় দেখা গেছে, বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট এনসেম্বল দ্বিতীয় হয়েছে। আর উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালির (আরএন) অবস্থান তৃতীয়।

তবে তিন পক্ষের কেউই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এই তিন পক্ষের একসঙ্গে কাজ করারও ইতিহাস নেই। এমন অবস্থায় দেশটি এখন ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পাওয়ার পথে রয়েছে।

প্রথম দফার নির্বাচনে আরএনের বিজয়ের পর বিভিন্ন জনমত জরিপে বলা হয়েছিল, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেও দলটি বিজয়ী হবে।

প্রথম দফা ভোটের পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে আসা ন্যাশনাল র‌্যালিকে নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন ফ্রান্সের উদার ও মধ্যপন্থীরা। তাই আরএনকে ঠেকাতে বামপন্থীদের জোট এনপিই ও মাখোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্সের মধ্যে আপস হয়। আরএনের বিরুদ্ধে পড়া ভোটগুলো যেন একজনই পান, সে জন্য এই দুই জোট মিলে দুই শতাধিক প্রার্থীকে ভোট থেকে সরিয়ে দেন। বাম ও মধ্যপন্থীদের এই কৌশলই কাজে দিয়েছে।

আরএন নেতা জরদান বারদেলা ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, তাঁদের জয় ঠেকাতে ‘অস্বাভাবিক রাজনৈতিক জোট’ করা হয়েছে। ন্যাশনাল র‌্যালি জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী হতেন বারদেলা।  

প্রেসিডেন্ট মাখোঁ গত ৯ জুন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সোশ্যালিস্ট (সমাজতান্ত্রিক), পরিবেশবাদী, কমিউনিস্ট ও কট্টর বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টি (এলএফআই) মিলে এনএফপি জোট গঠন করে। এই দলগুলো আগে একে অপরের সমালোচনা করত। দলগুলোর আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তবে কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের সুযোগ না দেওয়ার জন্য দলগুলো মিলে এই নির্বাচনী জোট গঠন করে।

এই জোটের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের পাস করা পেনশন ও অভিবাসনবিষয়ক সংশোধিত আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনা ও ভিসা আবেদনের বন্দোবস্ত করার জন্য একটি সহায়তাকারী সংস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যে কষ্ট করতে হচ্ছে, তা লাঘবে মৌলিক পণ্যগুলোর দাম সর্বোচ্চ কত হতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং ন্যূনতম বেতন বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থীদের এই জোট।

ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, বামপন্থী এনএফপি জোট ১৮২ আসন পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিতে হবে। তাতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই বেশি।

নির্বাচনে এনসেম্বল জোট ১৬৮ আসন এবং আরএন ১৪৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।