রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা দেওয়া হবে, এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। কয়েকটি দেশ তাঁদের অস্বস্তির কথা জানিয়েও দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার জানানো হয়, তারা ইউক্রেনকে গুচ্ছ বোমা বা ক্লাস্টার বোমা দেবে। তবে অন্য দেশের ভূখণ্ডে এ বোমা ব্যবহার করতে পারবে না কিয়েভ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়াকে ‘খুবই কঠিন একটি সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য, কানাডা ও স্পেন জানিয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের পক্ষে নয় তারা। মার্কিন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন, মজুত ও ব্যবহার বন্ধে ১২৩টি দেশ একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সই করেছে। এসব দেশের তালিকায় যুক্তরাজ্যও রয়েছে। যুক্তরাজ্য এ অস্ত্রের ব্যবহারকে সবসময় নিরুৎসাহিত করে।’
এ বিষয়ে স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রোবেলস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে কিছু কিছু অস্ত্র সরবরাহ করা যাবে না, এ বিষয়ে তাঁর দেশ দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু ক্লাস্টার বোমা দিয়ে তা নিশ্চিত করা যাবে না।’
মার্কিন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কানাডা সরকার। এতে বলা হয়েছে, বহু বছর ধরে অবিস্ফোরিত থাকতে পারে ক্লাস্টার বোমা। তাই এ বোমার ব্যবহার শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে কানাডা সরকারের উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার বন্ধে আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলার পক্ষে কানাডা।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তো একদিন থেমে যাবে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এ অস্ত্র বেসামরিক মানুষের জীবনের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে রয়ে যাবে।
যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্লাস্টার বোমার উৎপাদন, মজুত ও ব্যবহার বন্ধে করা আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করেনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে রুশ সেনারা। অন্যদিকে তদন্ত করে জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনীও এ বোমা ব্যবহার করেছে।
ক্লাস্টার বোমার বিশেষত্ব হলো, এতে একাধিক বিস্ফোরক বোম্বলেট থাকে। বছরের পর বছর এই বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও পরবর্তীতে যেকোন সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ কারণে বোমাটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এখন ইউক্রেনকে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যেসব ক্লাস্টার বোমা মজুত আছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তৈরি। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের তুলনায় রাশিয়ার কাছে ক্লাস্টার বোমার মজুত বেশি রয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে, তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেশটির আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের আরেকটি নির্লজ্জ প্রকাশ।
কিয়েভের শাসকদের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিয়ে ওয়াশিংটন ইউক্রেনের ধ্বংসযজ্ঞ বাড়াতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাখারোভা। তিনি বলেন, বিতর্কিত গুচ্ছ বোমা সতর্কতা ও দায়িত্বের সঙ্গে ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউক্রেন। তবে তাদের এ প্রতিশ্রুতির কোনো দাম নেই। এটা ওয়াশিংটনও ভালোভাবে জানে।