কারাগারে মারা যাওয়া রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির দেহ এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। নাভালনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিরা ইয়ারমিশ এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, নাভালনির মা লুডমিলা নাভালনায়াকে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে। নাভালনির সহযোগীদের অভিযোগ, আলামত নষ্ট করতে রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর মরদেহ লুকিয়ে রেখেছে।
রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের একটি কারাগারে গত শুক্রবার নাভালনির মৃত্যু হয় বলে দেশটির কারা কর্তৃপক্ষ জানায়। নাভালনির সহযোগীদের দাবি, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা নাভালনিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারও ৪৭ বছর বয়সী নাভালনির আকস্মিক মৃত্যুর জন্য রুশ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জরুরি ভিত্তিতে ওই ঘটনার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার নাভালনির মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে পুতিন এখন পর্যন্ত এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেননি। তবে ঘটনার ঠিক পরই ক্রেমলিন জানায়, তারা এ ব্যাপারে অবগত আছে এবং প্রেসিডেন্টকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কারণ নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও অবাস্তব’।
অ্যালেক্সি নাভালনি পুতিন সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি মস্কো থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত খার্প এলাকার ‘পোলার উলফ’ পেনাল কলোনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।
নাভালনির দল জানিয়েছে, অ্যালেক্সি নাভালনির মা লুডমিলা নাভালনায়াকে কারাগার থেকে জানানো হয় যে তাঁর ছেলে শুক্রবার হাঁটার সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলেন ও পরে মারা যান। নাভালনির সহযোগী ইয়ারমিশ বলেন, নাভালনির মা গতকাল কারাগারটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে আনুষ্ঠানিক এক নোটিশে জানানো হয়, নাভালনি স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ২টা ১৭ মিনিটে মারা গেছেন।
নাভালনির আরেক সহযোগী ইভান ঝাদানভ বলেন, লুডমিলাকে জানানো হয়, তাঁর ছেলে কোনো পূর্বলক্ষণ ছাড়াই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
নাভালনির সহযোগীদের ভাষ্য, নাভালনির মরদেহ কারাগারের কাছের শহর সলেখার্ডের একটি মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে তাঁর মাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছে ওই মর্গ বন্ধ দেখতে পান।
ইতিমধ্যে কারা কর্মকর্তারা লুডমিলাকে বলেছেন, প্রাথমিক ময়নাতদন্ত পরীক্ষায় স্পষ্ট কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই দ্বিতীয়বার মরদেহ পরীক্ষা করতে হবে।
এ অবস্থায় নাভালনির সহযোগীরা অভিযোগ করেন, প্রমাণ লুকানোর জন্য রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই মরদেহ নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে নাভালনির মরদেহ তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে ওভিডি-ইনফো নামে একটি স্বাধীন মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাভালনির মৃত্যুতে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও সমাবেশ করার অভিযোগে রাশিয়াজুড়ে ৩০০ জনের বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। ৩২টি শহর থেকে তাঁদের আটক করা হয়। এর মধ্যে রাজধানী মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ আটক হন।
নাভালনির মৃত্যুর খবরে বিভিন্ন দেশে রুশ দূতাবাসের কাছেও বিক্ষোভ হচ্ছে।
গতকাল জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে নাভালনির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘নাভালনির মৃত্যুতে যুক্তরাজ্য ব্যবস্থা নেবে।’