ট্রাসের পর যুক্তরাজ্যের হাল ধরবেন কে

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ফলে দলটির পরবর্তী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটা ঠিক করতে আবার দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে আরেক দফা ভোটাভুটি হবে। খবর বিবিসির

ট্রাসের উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হতে পারে। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা টরি হিসেবেও পরিচিত।

সম্ভাব্য প্রার্থীকে কমপক্ষে ১০০ সহকর্মী টরি পার্লামেন্ট সদস্যদের (এমপি) সমর্থন পেতে হবে। পার্লামেন্টে বর্তমানে টরি এমপির সংখ্যা ৩৫৭। সে হিসাবে তিনজনের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

সাধারণত যদি প্রার্থীর সংখ্যা দুজন অথবা এমনকি একজন হলে দলীয় সদস্যদের ভোট ছাড়াই তিনি নেতা নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

এখন পর্যন্ত প্রার্থিতার বিষয়টি কেউ নিশ্চিত করেননি। তবে পরবর্তী টরি নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন।

ঋষি সুনাক

ঋষি সুনাক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হতে এই গ্রীষ্মের শুরুতে লড়েছিলেন তাঁর সরকারেরই অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। অধিকাংশ টরি এমপির ভোট পেয়ে ট্রাসের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিলেন তিনি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর করপরিকল্পনা অর্থনীতি ধ্বংস করবে বলে প্রচারণার সময় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সুনাক। তবে তাঁর সেই সতর্কতা দলীয় সদস্যদের মধ্যে কোনো আবেদন তৈরি করতে পারেনি। তিনি ২১ হাজার ভোটে হেরে যান।

সুনাক ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে কম মানুষই তাঁর বিষয়ে জানত। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর সামলেছেন তিনি। করোনা মহামারির সময় অর্থনীতি সচল রাখতে সচেষ্ট ছিলেন সুনাক।

কিন্তু কর–সুবিধা নেওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক উঠলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় সুনাকের। কিছুদিন পরই লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে নিজেও জরিমানা গুনেছিলেন।
ইতিমধ্যে টরি এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন সুনাকের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঋষি সুনাকের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি।  গত ছয় সপ্তাহে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে তাঁর যোগ্যতার বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

পেনি মরডেন্ট

পেনি মরডেন্ট

পার্লামেন্টে তাৎক্ষণিক এক প্রশ্নের জবাব দিতে লিজ ট্রাসের অনুপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রিত্বের একটু স্বাদ নিতে পেরেছেন পেনি মরডেন্ট। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজটি করে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

মরডেন্ট আরেকবার নেতৃত্বের জন্য লড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি সহকর্মী এমপিদের ভালোই সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে চূড়ান্ত লড়াইয়ের ঠিক আগের বাছাইয়ে বাদ পড়ে যান তিনি।

ওই লড়াইয়ে ট্রাসকে সমর্থন দিয়েছিলেন মরডেন্ট। পরে তাঁকে হাউস অব কমনসের নেতা এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি।

বরিস জনসন

বরিস জনসন

নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে মাত্র এক সপ্তাহ সময় পাওয়া যাবে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেকেই থাকছেন পরিচিত মুখ থেকেই। এ ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করা বরিস জনসনের নামটা অন্য যে কারও চেয়ে বেশিই আসছে।

দলের মন্ত্রী ও এমপিদের গণবিদ্রোহের মুখে জুলাইতে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস। লকডাউনের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি আয়োজন থেকে শুরু করে বহু বিতর্কের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছিল।

কিন্তু সার্বিকভাবে এখনো পার্লামেন্ট এবং দলীয় সদস্যদের মধ্যে বরিসের অনেক মিত্র আছেন। দীর্ঘদিনের সমর্থক নাদিন ডরিসের যুক্তি, বরিসের ফেরা উচিত। কারণ, ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছেন।

বেন ওয়ালেস

বেন ওয়ালেস

নেতৃস্থানীয় অধিকাংশ টরিই দলে বিভক্তি জিইয়ে রেখেছেন। এ অবস্থায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকে নির্ভরযোগ্য মনে করছেন সহকর্মী এমপিরা। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ঘিরে নজরে আসেন তিনি। কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যুক্তরাজ্য।

ব্রেক্সিটবিরোধী হলেও ওয়ালেস বরিসের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক। এ জন্য ২০১৯ সালে তাঁকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছিল। রাজনীতিতে আসার আগে সৈনিক হিসেবে পেশাদার জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি।

কেমি বেডেনখ

কেমি বেডেনখ

কনজারভেটিভ পার্টির সর্বশেষ নেতৃত্বের লড়াইয়ে প্রার্থী হিসেবে কেমি বেডেনখ অনেকটা চমকই ছিলেন। ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাঁর পরিচিতি বাড়াতে সহায়ক ছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি জিততে পারেননি।

বেডেনখ তুলনামূলক জুনিয়র মন্ত্রী হয়েও জ্যেষ্ঠ কনজারভেটিভ সদস্য মাইকেল গভের সমর্থন পেয়েছিলেন। বর্ণবাদের মতো সামাজিক বৈষম্য নিয়ে কথা বলে তিনি আলোচনায় আসেন।

সুয়েলা ব্রেভারম্যান

সুয়েলা ব্রেভারম্যান

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের পদত্যাগের পর ট্রাসের ওপর চাপ আরও বাড়ে। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। নথি হস্তান্তরের বিধি ভেঙে সুয়েলার সরে দাঁড়ানোটা ছিল অস্বস্তিকর। তবে তাঁর ক্ষুব্ধ পদত্যাগপত্রে অভিবাসন ইস্যুতে দ্বিমতের বিষয়টি উঠে আসে।

দলের ডানপন্থীদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সুয়েলা। চলতি মাসের শুরুর দিকে দলের বার্ষিক এক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে রুয়ান্ডার উদ্দেশে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়া একটি ফ্লাইট দেখতে পারাটা তাঁর ‘স্বপ্ন’।

সাবেক এই আইনজীবী ব্রেক্সিট সমর্থক। তিনি বরিস জনসন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। সর্বশেষ নেতৃত্বের লড়াইয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ধাপের বাছাইয়ে বাদ পড়ে যান তিনি।

জেরেমি হান্ট

জেরেমি হান্ট

অর্থনৈতিক কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়লে অর্থমন্ত্রী কোয়াজি কোয়ার্টাঙকে সরিয়ে দেন ট্রাস। পরিস্থিতি সামলাতে সাবেক স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে তিনি এই পদে নিয়োগ দেন।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে হান্টকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়, টেলিভিশন এবং হাউস অব কমনসে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লাগাতার কথা বলে গেছেন তিনি। ট্রাসের অর্থনৈতিক কর্মসূচি ছুড়ে ফেলে দেন হান্ট। ইতিমধ্যে কিছু টরি এমপি তাঁকে ‘প্রকৃত প্রধানমন্ত্রী’ বলতে শুরু করেছেন।