ওসকিল নদীর পূর্ব তীরের নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখলের দাবি করেছেন ইউক্রেনের সেনারা। ইউক্রেনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের ওই এলাকায় রুশ ও ইউক্রেনের সেনাদের সম্মুখ লড়াই চলছে। ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতিরোধে খারকিভ অঞ্চল থেকে প্রায় সম্পূর্ণ পিছু হটেছেন রুশ সেনারা। ইউক্রেনের একজন আঞ্চলিক নেতা বলেছেন, তাঁদের সেনাদের পরবর্তী লক্ষ্য প্রতিবেশী লুহানস্ক পুনর্দখল করা। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পরবর্তী অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনারা।
উত্তর–পূর্বাঞ্চল ছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টাহামলা চালাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। তবে এ মাসে তারা উত্তরে খারকিভ অঞ্চলে নাটকীয় অগ্রগতি ধরে রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিবিএসকে বলেন, ইউক্রেনকে বড় মূল্য চুকাতে হচ্ছে। কিন্তু অনেকে রাশিয়াকে যেভাবে ক্ষমতাধর ও সক্ষম বলে আসছিলেন, সেভাবে রুশ বাহিনী অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। মূলত রুশ বাহিনী ইউক্রেনে ব্যর্থ বলেই দাবি তাঁর।
লুহানস্কের আঞ্চলিক প্রধান সেরহি হাইদাই অনলাইনে একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি ট্যাংক পন্টুন সেতু পার হচ্ছে। হাইদাই বলেন, ওসকিল নদীর পূর্ব তীর এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। তিনি দাবি করেন, ‘এর পরের লক্ষ্য হচ্ছে পাশের লুহানস্ক অঞ্চল। পুনর্দখলে আর খুব বেশি দূরে নেই।’
ইউক্রেনের সেনারা ওসকিলের পূর্ব তীরের নিয়ন্ত্রণ যদি ধরে রাখতে পারেন, তাহলে এটা হবে তাঁদের জন্য একটা বড় অর্জন। হাইদাইয়ের দাবি, এরপরের লক্ষ্য হলো লিমান শহরকে দখলমুক্ত করা। গত মে মাসে রাশিয়ার সেনারা এই শহর দখলে নিয়েছিলেন। ইজিয়াম থেকে দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে ইজিয়াম শহরের অবস্থান।
এদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ইজিয়াম শহরে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ওই গণকবরটিতে অন্তত ৪৪০ জনের লাশ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি রুশ বাহিনীর কাছ থেকে ইজিয়াম শহর দখলমুক্ত করেন ইউক্রেনের সেনারা। নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর শহরটিতে গণকবর পাওয়ার কথা জানায় ইউক্রেন। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একে কিয়েভের অপপ্রচার বলা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনীয় সেনাদের পরবর্তী অভিযান প্রস্তুতির কথা বলেছেন। গত রোববার রাতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলো একধরনের নীরব মনে হতে পারে। তবে এখন আর কোথাও কোনো স্থবিরতা থাকবে না। পরবর্তী অভিযানের প্রস্তুতি আছে। পুরো ইউক্রেনকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে।
ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় খারকিভে রুশ বাহিনীর পিছু হটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। গত শুক্রবার তিনি এ নিয়ে জনসমক্ষে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টাহামলায় রুশ পরিকল্পনা বদলাবে না। ইউক্রেনের হামলা অব্যাহত থাকলে তাঁরা আরও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে এক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হামলার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী এনারগোতাম বলেছে, মাইকোলাইভ অঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পারমাণবিক কেন্দ্রের চুল্লি থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার বিষয়টি রয়টার্সের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এ নিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছে। এদিকে গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের হেলিকপ্টারগুলো ইউক্রেনের যুদ্ধ সরঞ্জাম ধ্বংস করছে।