বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৩০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করা আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো আগামী নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বেল্টা রোববার এই কথা জানিয়েছে।
১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত বেলারুশের এই শাসক। ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এই প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘কোনো দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্ট তাঁর জনগণকে ত্যাগ করেন না।’ তাই ২০২৫ সালের নির্বাচনে লড়তে চান তিনি।
লুকাশেঙ্কো দেশের সংসদীয় এবং স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট দেন রোববার। সেখানে একটি ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘তাঁদের (নির্বাসিত বিরোধীদের) বলুন যে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’
গতকালের নির্বাচনটি ২০২০ সালের বিতর্কিত ভোটের পর প্রথম কোনো নির্বাচন। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ষষ্ঠ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন লুকাশেঙ্কো। এই ফলাফলে দেশের বিরোধীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে প্রতিবাদ চলে।
পুতিনের ওপর ‘সম্পূর্ণ নির্ভরশীল’
২০২০ সালের নির্বাচন-পরবর্তী নির্মম দমন-পীড়নের সময় ৩৫ হাজারের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। হাজার হাজার মানুষকে পুলিশি হেফাজতে মারধর করা হয়। বেলারুশের শত শত স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি রাজনৈতিক বন্দী বেলারুশের কারাগারে রয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন লুকাশেঙ্কোকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
২০২২ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর জন্য বেলারুশের অঞ্চল ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন লুকাশেঙ্কো৷ ভাগনার গ্রুপের হাজার হাজার সদস্য বেলারুশে অবস্থান নিয়েছেন।
সংসদীয় ভোট লুকাশেঙ্কোকে আরও শক্তিশালী করবে
রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় জাতীয় সংসদের ১১০ জন সদস্য এবং স্থানীয় পরিষদের প্রায় ১২ হাজার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেন ভোটাররা। বেশির ভাগ প্রার্থীই চারটি নিবন্ধিত দলের। দলগুলো হলো বেলায়া রুশ, কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও পার্টি অব লেবার অ্যান্ড জাস্টিস।
এই দলগুলোর সবাই লুকাশেঙ্কোর নীতি সমর্থন করেন। গত বছর প্রায় ১২টি বিরোধী দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতে, গতকাল ৪০ শতাংশের বেশি ভোটার প্রাথমিক পর্যায়ে ভোট দিয়েছেন। মঙ্গল থেকে শনিবার পর্যন্ত এই প্রাথমিক ভোটপর্ব চলে।
বেলারুশের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
নির্বাচনে ব্যাপকভাবে কারচুপি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বেলারুশের কর্মকর্তারা অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) থেকে নির্বাচনের কোনো পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাননি। ১৯৯৫ সাল থেকে বেলারুশের একটি নির্বাচনকেও অবাধ ও সুষ্ঠু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি ওএসসিই।
পর্যবেক্ষকদের মত, সাড়ে তিন বছর আগের বিক্ষোভের পরও ক্ষমতার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লুকাশেঙ্কোর হাতেই রয়েছে। এটা দেখাতে নির্বাচনকে ব্যবহার করতে চান এই নেতা।
বেলারুশের বিরোধী নেত্রী স্বেতলানা স্তিখানৌসকায়া বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর ভাষ্য, ‘এটি একটি প্রহসন, একটি শো, একটি সার্কাস। কিন্তু এটি কোনো মানুষের পছন্দ নয়।’