ন্যাটোপ্রধানের সতর্কতা: এখনই শেষ হচ্ছে না ইউক্রেন যুদ্ধ

বন্দরনগরী ওদেসায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা। ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনও।

সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হচ্ছে না বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান ইয়ানেস স্টলটেনবার্গ। জার্মানির একটি গণমাধ্যমে গতকাল রোববার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন।

এমন সময় ন্যাটোপ্রধান এ মন্তব্য করলেন, যখন পশ্চিমা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন।

স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘বেশির ভাগ যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় যে ধারণা করা হয়, তার চেয়ে বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। তাই ইউক্রেনেও দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য অবশ্যই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা পাঠালে এ যুদ্ধের সূচনা হয়। এতে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে আবার যুদ্ধ ফিরে আসে।

ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে গেড়ে বসা রুশ বাহিনীকে হটাতে গত জুনে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে কিয়েভ বাহিনী। তবে পাল্টা আক্রমণে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অর্জন সামান্যই বলা চলে।

ইউক্রেন বলে কিছু থাকবে না

ন্যাটোপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই চাই দ্রুত শান্তি ফিরুক। কিন্তু একই সময় আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধ থামান, তাহলে তাঁদের দেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’

স্টলটেনবার্গ আরও বলেন, ‘যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির পুতিন এবং রাশিয়া তাদের অস্ত্র গুটিয়ে নেন, তাহলেই কেবল আমরা শান্তি ফিরে পাব।’

ন্যাটোর সদস্য হওয়া নিয়ে ইউক্রেনের প্রত্যাশার বিষয়ে জোটের প্রধান বলেন, ‘ইউক্রেন শেষ পর্যন্ত ন্যাটোভুক্ত হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জোটের সম্মেলনে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পথে কিয়েভ অনেক দূর এগিয়েছে।

স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনকে আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান দরকার হবে। অন্যথায় ইতিহাসের (চলমান যুদ্ধের) পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।’

নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের পর ইউক্রেনকে সদস্য করার বিষয়ে গত জুলাইয়ে ভিলনিয়াসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ন্যাটো জোটের নেতারা সম্মত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিতে শাসনব্যবস্থায় সংস্কার আনা।

ওদেসায় ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল দিনের শুরুতে ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরনগরী ওদেসায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে কৃষি স্থাপনাসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম অ্যাপে জানিয়েছে ইউক্রেন।

দেশটির বিমানবাহিনী বলেছে, হামলায় ইরানের তৈরি ছয়টি শাহেদ ড্রোন ও ১০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই সব কটি ড্রোন এবং ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

ওদেসার আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ কিপার টেলিগ্রামে বলেন, হামলায় ওই অঞ্চলের পূর্ব দিকে অবস্থিত বেরেজিভস্কি জেলার একটি শস্যগুদাম এবং কয়েকটি কৃষি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মস্কোয় ড্রোন হামলা

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল মস্কোর উপকণ্ঠে একটি এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ছয়টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।

টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কোর ইস্ত্রিনস্কি জেলায় শনিবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের উপকূলে শনিবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে দুটি এবং রাত পৌনে ২টা থেকে ২টা ২০ মিনিটের মধ্যে দ্বীপে আরও চারটি ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংস করা হয়।