লন্ডন থেকে সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আরেকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তকে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি চেয়ে আপিল আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন শামীমা। তবে তা খারিজ হয়ে গেছে।
এখন মামলাটি নিয়ে শুনানি করতে শামীমাকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে হবে।
২৪ বছর বয়সী শামীমা বেগম ৯ বছর আগে যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসের সঙ্গে যোগ দেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সে সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন শামীমা বেগম। চলতি বছরের শুরুর দিকে আপিল আদালতের তিনজন বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন খারিজ করে দেন।
শামীমার আইনজীবীরা বলছেন, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি বেআইনি। কারণ, শামীমা মানব পাচারের শিকার হয়েছিলেন কি না, তা ব্রিটিশ কর্মকর্তারা যথাযথভাবে বিবেচনা করেননি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমের জন্ম যুক্তরাজ্যে। ২০১৫ সালে যে তিন কিশোরী আইএসকে সমর্থন জানাতে পূর্ব লন্ডন থেকে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন শামীমা। অপর দুজন তাঁরই বন্ধু। তাঁদের নাম খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসি। ধারণা করা হয়, খাদিজা মারা গেছেন। তবে আবাসির কী পরিণতি হয়েছে, তা জানা যায়নি।
শামীমা বেগম তিন বছরের বেশি সময় ধরে আইএসের নিয়মকানুন ও শাসনের অধীনে ছিলেন। শামীমা নেদারল্যান্ডস থেকে সিরিয়ায় যাওয়া এক আইএস সদস্যকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর স্বামী এখন কুর্দিদের একটি আটককেন্দ্রে বন্দী। শামীমা ও তাঁর স্বামী রাকাতে থাকতেন। তাঁদের তিনটি সন্তান হয়েছিল। তবে তারা সবাই মারা গেছে।
২০১৯ সালে আইএস পরাজিত হওয়ার পর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আল–রোজ শিবিরে শামীমার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি এখনো সেখানে আছেন।
শামীমার আইনজীবীরা বলছেন, শিবিরের অবস্থা সংকটাপূর্ণ। সেখানে বসবাসকারীরা ‘অনেকটাই অনাহারে’ দিন কাটাচ্ছেন। রোগবালাই সেখানকার নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।
শামীমার পক্ষ থেকে দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে তাঁর আইনজীবীরা লিখেছেন, ‘বাস্তবতা হলো, অন্য ব্রিটিশ নারী ও শিশুদের সঙ্গে শামীমাকে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি কারা শিবিরে নির্বিচারে আটকে রাখা হয়েছে।’
শামীমা বেগম স্বীকার করেছেন, তিনি জেনেশুনেই একটি নিষিদ্ধ সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এখন এ জন্য অনুশোচনা বোধ করেন। বলেছেন, তিনি ‘লজ্জিত’।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষা করাটা তাঁদের অগ্রাধিকারের বিষয়। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এমন যেকোনো সিদ্ধান্তে তাঁরা অটল থাকবেন।