দ্য আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম বা অ্যাটাকমস ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন
দ্য আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম বা অ্যাটাকমস ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন

এটিএসিএমএস

যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্ষেপণাস্ত্র কতটা শক্তিশালী, ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় কি ঘুরিয়ে দেবে

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি পেয়ে দেশটির সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পরাজয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ডেমোক্র্যাটদের বিদায় নিশ্চিত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে এ অনুমোদন দিয়েছেন। এখন রাশিয়ায় ইউক্রেনের এ হামলার ফলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এত দিন এটিএসিএমএস ইউক্রেনকে দিলেও দূরপাল্লার এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলায় রাজি ছিল না। এর কারণ হিসেবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, কিয়েভ যদি এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালায়, তাহলে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র কতটা শক্তিশালী এবং ইউক্রেন এটা ব্যবহার করায় যুদ্ধে এর প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র কী

দ্য আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম বা এটিএসিএমএস ভূমি থেকে ভূমিতে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এর পাল্লাই এ ক্ষেপণাস্ত্রকে ইউক্রেনের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন। এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে প্রয়োজন হয় এম২৭০ মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) অথবা চাকাযুক্ত এম১৪২ হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেমের (হিমার্স)। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ মার্কিন ডলার।

তরল জ্বালানি নয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র চলে সলিড রকেট প্রপোলেন্ট দিয়ে। উৎক্ষেপণ করার পরপরই এটি দ্রুতগতিতে অনেক ওপরে ওঠে। বায়ুমণ্ডলে পথ পাড়ি দিয়ে দ্রুতগতিতে বড় বাঁক নিয়ে সেটি লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে যেতে থাকে। এসব বৈশিষ্ট্য এই ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যভ্রষ্ট (ইন্টারসেপ্ট) করা বেশ কঠিন করে তোলে।

এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র পৃথক দুই ধরনের বোমা (ওয়ারহেড) বহনে সক্ষম। এর মধ্যে একটি গুচ্ছবোমা। এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে শত শত বোমা নিয়ে একটি ওয়ারহেড বানানো হতে পারে। এ ধরনের বোমা একটি বড় এলাকাজুড়ে থাকা হালকা সাঁজোয়া যান ধ্বংস করতে সক্ষম। এর মধ্যে থাকতে পারে ঘাঁটিতে থাকা যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও সেনা ইউনিট। গুচ্ছ বোমা দিয়ে হামলা কার্যকর হলেও এ ধরনের বোমা ব্যবহারের একটি বড় ঝুঁকি আছে। কারণ, গুচ্ছ বোমায় থাকা সব বোমা বিস্ফোরিত না–ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংঘাত শেষের বহুদিন পরও এ ধরনের বোমা বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে যায়।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক নয়, থাকে একটি বোমা। এ ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক দিয়ে ২২৫ কেজি ওজনের একটি বোমা দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ ধরনের বোমা শত শত সামরিক স্থাপনা ও বড় ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম।

কয়েক দশক ধরে যুদ্ধে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় প্রথমবারের মতো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার দেখে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বর্তমানে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে প্রিসাইশন স্ট্রাইক মিসাইল ব্যবহার করছে। এটি এটিএসিএমএসের চেয়েও অত্যাধুনিক। এ ক্ষেপণাস্ত্রের গতি আরও বেশি। এটিএসিএমএসের চেয়ে আকারে আরও হালকা অস্ত্র নিয়ে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ইউক্রেনকে প্রিসাইশন স্ট্রাইক মিসাইল দেওয়া হতে পারে এমন কোনো আলোচনা এখনো শোনা যায়নি।

কতটা কাজে আসবে ইউক্রেনের

সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি পেলেও যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্রটির সরবরাহ পাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়াও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাশিয়ার আরও অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমানসহ সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করছে ক্রেমলিন।

তবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে এভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ডে সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হলে সম্মুখ লড়াইয়ে থাকা রুশ সেনাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। কারণ, এতে তাঁদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ কমে যাবে। পাশাপাশি আকাশপথে সহযোগিতা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা রুশ সেনাদের।

ইউক্রেনের উত্তরে দেশটির ভূখণ্ড দখল করে চলেছে রুশ বাহিনী। পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংকটে ইউক্রেনীয় বাহিনীর মনোবলও কিছুটা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি ইউক্রেনকে কিছু সুবিধা এনে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুদ্ধের মোড় কি ঘুরিয়ে দেবে

কিয়েভে নিযুক্ত এক পশ্চিমা কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা (রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলায় ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি) যুদ্ধে বড় কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসবে। ইউক্রেনের পাশে থাকার ও দেশটিকে সহায়তা দিয়ে যাওয়ার কঠোর অবস্থানের বিষয়টি জানান দেওয়ার জন্য এটা একটা প্রতীকী সিদ্ধান্ত। তবে এতে রাশিয়াকে যুদ্ধের জন্য আরও বেশি মূল্য চোকাতে হবে।’

এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমতি পেলেও কিয়েভকে আসলে এই ক্ষেপণাস্ত্র কতটা দেওয়া হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন বলে মনে করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে উপসহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভলিন ফারকান। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এখন বড় প্রশ্ন হলো তাদের (ইউক্রেনের) কাছে কতটি (এটিএসিএমএস) ক্ষেপণাস্ত্র আছে? আমরা শুনেছি, পেন্টাগনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে ইউক্রেনকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র এখন তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছে নেই।’ তবে এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমতি ইউক্রেনকে মানসিক দিক থেকে কিছুটা শক্তি দেবে বলে মনে করেন তিনি।