লেপার্ড–২ ট্যাংক কী, এটা কীভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে পারে

ছবি: এএফপি

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন আরও অস্ত্র ও ট্যাংক চায়। রুশ সেনাদের মোকাবিলা করতে না পেরে জার্মানির লেপার্ড-২ ট্যাংক চায় দেশটি। এ জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউক্রেন। গত বছর যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমাদের কাছ থেকে নিয়মিত অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন।

এবার তাদের কাছে সরাসরি ট্যাংক সহায়তা চেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত শুক্রবার জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে ন্যাটো ও ৫০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠক শুরু করেছেন। ওই বৈঠকের আগে পশ্চিমাদের কাছে দ্রুত এ ট্যাংক সরবরাহের আবেদন জানিয়েছেন জেলেনস্কি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লেপার্ড ট্যাংকের জন্য কেন মরিয়া ইউক্রেন। এ ট্যাংক কি যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে পারবে?

লেপার্ড ট্যাংক ইউরোপীয় দেশগুলো ব্যবহার করে। এ ট্যাংকগুলো সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। ইউক্রেনে এগুলো পাঠানো সহজ। রক্ষণাবেক্ষণও সহজ হবে।
মিন্না অ্যালান্ডার, রিচার্স ফেলো,ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স

প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে আলোচ্য বিষয় ছিল জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে ইউক্রেনে লেপার্ড–২ ট্যাংক পাঠানো। পাশাপাশি জার্মানি যাতে ইউক্রেনকে আলাদাভাবে কিছু সাহায্য করে, এটাও ছিল আলোচ্যসূচিতে। কিন্তু জার্মানি এখনো ইউক্রেনকে লেপার্ড–২ ট্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। যুদ্ধের এ পর্যায়ে লেপার্ড–২ ট্যাংক কী, কীভাবে এ সামরিক অস্ত্র ইউক্রেনের জন্য মূল্যবান হতে পারে, তা আলোচনা করা হলো।

বসনিয়ায় লেপার্ড ২ ট্যাংক

পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহে একটি ‘সম্ভাব্য সুযোগ’ তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, রসদের ঘাটতি পূরণ এবং অতিরিক্ত সৈন্য একত্র করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রুশ বাহিনীতে গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষিত সৈন্যের সংকট রয়েছে। আবার রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছে, শত্রুদেশকে ট্যাংক সরবরাহ করা হলে এ সংঘাতকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে’ বাড়িয়ে দেবে।

ব্রিটেন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাবে। কিন্তু কিয়েভের সরকারের চাহিদা আরও বেশি। সে কারণে জার্মানির লেপার্ড-২ ট্যাংক এ যুদ্ধের সেই সমীকরণের চাবিকাঠি।

লেপার্ড–২ ট্যাংকের বিশেষত্ব কী

লেপার্ড–২ ট্যাংক হলো বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংক। জার্মানির সেনাবাহিনী এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এ ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউরোপীয় নয়—এমন দেশগুলোর মধ্য কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া এই ট্যাংক ব্যবহার করে। আফগানিস্তান, কসোভো ও সিরিয়ার সংঘাতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত এ যুদ্ধট্যাংকের ব্যবহার দেখেছে বিশ্ববাসী।

এ ট্যাংকের নানা বৈশিষ্ট্য আছে। ডিজাইনও বিভিন্ন রকম হয়। এ ট্যাংকে নাইটভিশন ইকুইপমেন্ট এবং একটি লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার আছে, এর সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব মাপা যায়। লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার রুক্ষ ভূখণ্ড বা রুক্ষ ভূমির ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় চলমান লক্ষ্যের ওপর ভালোভাবে নজরদারি করতে সাহায্য করে।

লেপার্ড–২ কীভাবে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ১১ মাস চলছে। এত দিন ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই পক্ষই যুদ্ধে সোভিয়েত–যুগের ট্যাংক ব্যবহার করে আসছে। সেখানে লেপার্ড–২-এর মতো আধুনিক যুদ্ধট্যাংক ব্যবহৃত হলে ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করবে। ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মিত্রদের থেকে সামরিক সহায়তা চায়। দীর্ঘদিন ধরেই জেলেনস্কি তাঁর মিত্রদেশগুলোর কাছে ট্যাংক দিয়ে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন।

তার মধ্যে রয়েছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা রুখে দেওয়ার ব্যবস্থা। দূরপাল্লার কামান থেকে রক্ষা করার মতো যুদ্ধবিমানও চাইছেন জেলেনস্কি। এ পরিস্থিতিতে লেপার্ড–২ পেলে রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধে ইউক্রেনের জন্য ভালোই হবে। রাশিয়া কয়েক মাস আগে পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক প্রদেশের দুটি শহর দখল করেছে। ইউক্রেন তার হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে চায়। শীতের শেষে আসছে বসন্তে যুদ্ধের দ্বিতীয় বর্ষে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বড় লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে ইউক্রেনের কাছে কত অস্ত্র পৌঁছাচ্ছে বা কী ধরনের উন্নত মানের অস্ত্র পৌঁছাচ্ছে, তার ওপর।

অন্যান্য ট্যাংকের তুলনায় লেপার্ডের সুবিধা কী

যুক্তরাজ্য চ্যালেঞ্জার–২ সিরিজে ১৪টি ট্যাংক ইউক্রেনকে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ওয়াশিংটন প্রায় ১০০ স্ট্রেকার সাঁজোয়া যুদ্ধযান সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছে; যদিও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের তৈরি এম ওয়ান আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠাতে চায় না।

কারণ, এ ট্যাংক ক্রমাগত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন এবং চালাতে সাধারণত বিশেষ জ্বালানি দরকার হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেপার্ড–২–এর মেরামত ও সরবরাহ তুলনামূলক সহজ।

ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের রিচার্স ফেলো মিন্না অ্যালান্ডার বলেন, ‘লেপার্ড ট্যাংকগুলো ইউরোপে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এ ট্যাংক ব্যবহার করে, আর এ ট্যাংকগুলো সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। ইউক্রেনে এগুলো পাঠানো সহজ। রক্ষণাবেক্ষণও সহজ হবে। এগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশও ইউরোপে আছে, তাই ইউক্রেনীয়দের প্রশিক্ষণ সহজ হবে।’

তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি