রাশিয়ার বিরোধী নেতা কারাবন্দী অ্যালেক্সি নাভালনি ছয় দিন ধরে নিখোঁজ। তাঁর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁর আইনজীবীরা। এবং এখন তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছে, সেটিও তাঁরা জানেন না।
নাভালনিকে সর্বশেষ আইকে-৬ পেনাল কলোনিতে রাখা হয়েছিল।
রাশিয়ার পেনাল কলোনিগুলো বন্দীদের কঠিন জীবনযাত্রা ও বর্বরতার জন্য পরিচিত। বন্দীদের পৃথক সেলের বদলে ব্যারাকে রাখা হয়। তাঁদের দিয়ে জোর করে দৈনন্দিন কাজ করানো হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হলেও তাঁদের চলাফেরা করার সুযোগ বেশ সীমিত।
উগ্রপন্থায় উসকানি ও অর্থায়ন এবং একটি উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার দায়ে নাভালনিকে গত আগস্টে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরই মধ্যে তিনি প্রতারণা ও অন্যান্য অভিযোগের দায়ে সাড়ে ১১ বছর কারাভোগ করেছেন। যদিও তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নাভালনির সমর্থকেরা দাবি করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা বন্ধ করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাভালনিকে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী করা হয়েছে।
নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, আইনজীবীরা দুটি পেনাল কলোনিতে ঢুকতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন। নাভালনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁরা জানতে পেরেছেন ৪৭ বছর বয়সী নাভালনি আইকে-৬ বা আইকে-৭ কোনো পেনাল কলোনিতেই নেই।
নাভালনি গত ছয় দিন ধরে নিখোঁজ উল্লেখ করে কিরা বলেন, ‘গত শুক্রবার ও আজ কোনো পেনাল কলোনিই তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি।’
নাভালনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
২০২০ সালের ২০ আগস্ট সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কোয় যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন।
জার্মানির চিকিৎসকেরা জানান, নাভালনিকে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে বলে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ফ্রান্স ও সুইডেনের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেও নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের প্রমাণ মিলেছে।
নাভালনির দলের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে।
তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন। একই সঙ্গে রাশিয়ার দাবি, তাদের চিকিৎসকেরা বিষের উপস্থিতি পাননি। নাভালনির ওপর রাসায়নিক প্রয়োগের ব্যাপারে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
ক্রেমলিনের হুমকি উপেক্ষা করে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের মাসেই অর্থ আত্মসাতের পুরোনো একটি মামলায় তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।