বেশ কিছুদিন ধরেই ইউক্রেনের খেরসন শহরের দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে কিয়েভ বাহিনী। যুদ্ধ শুরুর কিছু দিন পরেই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল রুশ বাহিনী। এ অবস্থায় বুধবার সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু কমান্ডার সার্গেই সুরোভিকিনের সঙ্গে বৈঠক থেকে এ ঘোষণা দেন। বৈঠকটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
ইউক্রেনের বাহিনী কয়েক সপ্তাহ ধরে কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী এই শহরে ঢোকার পথের আশপাশের সব গ্রাম দখল করে নিচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পেছনের কারণ কী এবং এর পরিণতি কী হতে পারে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চলাকালে খেরসন হলো প্রথম বড় শহর, যা রুশ বাহিনী দখল করে নেয় এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী এটাই।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বৈঠকে জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বলেন, খেরসন শহরে রুশ সেনাদের রসদ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় সোয়া লাখ মানুষকে নিপরো নদীর ডান পাশের তির থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুরোভিকিন বলেন, ‘সরিয়ে নেওয়ার সময় তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সম্ভাব্য সব করেছি। আমি জানি, এটা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হলো সৈন্যদের জীবন রক্ষা করা। আর সাধারণভাবে বললে সৈন্য দলের যুদ্ধের সক্ষমতা ধরে রাখা। তাই নিপরো নদীর ডান তীরে তাদের রাখাটা অর্থহীন।’
এই সেনা প্রত্যাহার কারণে রাশিয়ার নেতৃত্বের সমালোচনা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ইউক্রেনে সেনা নিযুক্তির ঘোষণা দেওয়ার পর ইতিমধ্যে রাশিয়ায় পুতিনের সমর্থন কমেছে।
বুধবার ভোরের দিকে খেরসন শহরে যাওয়ার পথের প্রধান সেতুটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। ইউক্রেন বাহিনী এই বিধ্বস্ত সেতুর ছবি পোস্ট করে। তাদের অনুমান, রাশিয়ার সেনারা পশ্চাদপসরণ করার প্রস্তুতির জন্য সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছে।
ন্যাটো প্রধান ইয়ানেস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, পুতিন ইউক্রেনের সাহস ও লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। পাশাপাশি কিয়েভকে ন্যাটো মিত্রদের সমর্থন দেওয়ার জন্য যে আশ্বাস, তা অবমূল্যায়নের ভুল করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সপ্তাহে খেরসন অঞ্চলের কিছু অংশ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে জানিয়ে বলেছিলেন, বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ হতে দেওয়া যাবে না।
রুশ সেনাদের খেরসন শহর থেকে সরে যাওয়ার খবর তাদের সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করার একটি ফাঁদ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির রাজনৈতিক উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক এক বিবৃতিতে রয়টার্সকে বলেন, ‘খেরসন শহর থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার সম্পর্কে কথা বলার উপযুক্ত সময় এখন নয়। যতক্ষণ না ইউক্রেনের পতাকা খেরসনের আকাশে উড়ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলার কোনো মানে নেই।’
এই উপদেষ্টা আরও বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি গ্রুপকে শহরে রাখা হচ্ছে এবং এ অঞ্চলে আরও জনবলও নিয়ে আসা হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে গণভোট আয়োজন করে ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলকে রাশিয়া তাদের অংশ করে নিয়েছে, এর মধ্যে একটি খেরসন। ওই অঞ্চলের রাজধানী খেরসন শহর।
এই সেনা প্রত্যাহারের কারণে রাশিয়ার নেতৃত্বের সমালোচনা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ইউক্রেনে সেনা নিযুক্তির ঘোষণা দেওয়ার ইতিমধ্যে রাশিয়ায় পুতিনের প্রতি সমর্থন কমেছে।
কৌশলগতভাবে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ইউক্রেন বিজয়ী হলে দেশটি রাশিয়া থেকে ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করবে। মস্কো ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটিকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।
একই সঙ্গে এ বিজয় ইউক্রেনকে আজভ সাগরে প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেবে, যা তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর পুতিনের দিক থেকে যা হবে, তা হলো পুতিন পশ্চিমা বিশ্বকে তাঁর ক্ষমতা দেখানোর যে হম্বিতম্বি করেছেন, তা মুখ থুবড়ে পড়বে।