ইউক্রেনে নতুন অস্ত্র আসছে। মিত্রদের কাছে কিয়েভের নতুন চাওয়া যুদ্ধবিমান। ইউক্রেনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে ঝুলে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি সেখানে তাদের ট্যাংক পাঠাতে সম্মত হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এর প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ অস্ত্র পাঠানো মানে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এভাবে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়টিকে ইউক্রেন যুদ্ধের নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপীয় রাজধানী এবং ওয়াশিংটন ক্রমাগত বিবৃতি দেয় যে ট্যাংকসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র পাঠানোর অর্থ কোনোভাবেই শত্রুতায় তাদের জড়িত হওয়া নয়। আমরা তাদের সঙ্গে একমত নই। মস্কো একে সংঘর্ষে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার বিষয় হিসেবে দেখছেদিমিত্রি পেসকভ, ক্রেমলিনের মুখপাত্র
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনে তীব্র হামলা শুরু করেছে রুশ বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে উন্নত ট্যাংক (লেপার্ড-২) দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এ হামলা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কিয়েভ ও ওদেসা অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেন রুশ সেনারা। এর আগে রাতেও ব্যাপক ড্রোন হামলা চালানো হয়। এ হামলায় কিয়েভে একজন নিহত হয়েছেন। ওদেসা অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কিয়েভজুড়ে বিমান হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। হামলা থেকে বাঁচতে লোকজন রাজধানীর মেট্রো স্টেশনগুলোতে আশ্রয় নেন। গত অক্টোবর মাস থেকেই রুশ সেনারা ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেন। এ কারণে এই তীব্র শীতের মধ্যেও দেশটির মানুষকে বিদ্যুৎহীন কাটাতে হচ্ছে।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত বলেন, ছয়টি টিউ-৯৫ যুদ্ধবিমান থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁর দাবি, ৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। কিয়েভ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিয়েভে ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। তবে এখনো হুমকি বিদ্যমান। তাই বাসিন্দাদের এখনই আশ্রয়স্থল ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই কিয়েভের দুটি জেলায় বড় ধরনের দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন দুজন। কিয়েভ ছাড়াও ওদেসায় বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে ইউক্রেনের সেনারা দাবি করেন, বৃহস্পতিবার রাতে রুশ সেনাদের চালানো ড্রোন হামলার সময় ২৪টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি ড্রোন কিয়েভ ও এর আশপাশের এলাকায়। এ হামলার তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এবার যুদ্ধবিমান চাইছে ইউক্রেন
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, তাঁরা কিয়েভকে যে লেপার্ড ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা আগামী মার্চ বা এপ্রিলের শুরুতে পৌঁছাতে পারে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেনের সেনাদের ট্যাংক চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু হবে। জার্মানি ছাড়াও চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ। এবার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে যুদ্ধবিমান চাইছে ইউক্রেন সরকার। মিত্রদের কাছে চতুর্থ প্রজন্মের মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের অনুরোধ করবে কিয়েভ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক ট্যাংক চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
কয়েক সপ্তাহের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল জার্মানি জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক দেবে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দেবে বলেও জানিয়েছে। এর আগে দেশটিকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। পশ্চিমাদের ঘোষিত এসব ট্যাংক অতি দ্রুত সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। যুদ্ধ শুরুর বছরখানেকের মাথায় এসে মিত্রদের কাছ থেকে এ ট্যাংক পাওয়ার ঘোষণা ইউক্রেনের জন্য অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে দেশটি এতেই খুশি নয়; এবার দেশটির চাওয়া অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভের উপদেষ্টা ইউরি সাক বলেন, পরবর্তী বড় চাওয়া হবে যুদ্ধবিমান। ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। গতকাল তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেওয়ার বিষয়ে মিত্রদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি; আমি এখনো সেটাই বলছি।’
যুদ্ধে জড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ
ইউক্রেনকে ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি বিষয়ে গতকাল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনে পশ্চিমা ট্যাংক সরবরাহের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি সংঘাতে সরাসরি এবং ক্রমবর্ধমান মার্কিন এবং ইউরোপীয় সম্পৃক্ততা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইউরোপীয় রাজধানী এবং ওয়াশিংটন ক্রমাগত বিবৃতি দেয় যে ট্যাংকসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র পাঠানোর অর্থ কোনোভাবেই শত্রুতায় তাদের জড়িত হওয়া নয়। আমরা তাদের সঙ্গে একমত নই। মস্কো একে সংঘর্ষে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার বিষয় হিসেবে দেখছে।’
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বিশ্লেষকেরা বলছেন, চলমান এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়। এর ফলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ক্রেমলিন বলছে, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহ করলেও তাতে বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। বরং রাশিয়াকে হারাতে পশ্চিমারা যে ভ্রমের মধ্যে আছে, সে জন্য তাদের অনুশোচনা করতে হবে।