ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের আশঙ্কা আপাতত এড়ানো সম্ভব হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে অনেক মিত্রদেশ
ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের আশঙ্কা আপাতত এড়ানো সম্ভব হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে অনেক মিত্রদেশ

কট্টর ডানপন্থীদের পরাজয়ে ফ্রান্সের ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে স্বস্তি, শঙ্কাও কম নয়

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে মারিন লো পেনের কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) জয় পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে ফ্রান্সের অনেক মিত্রদেশ। তারা মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি অন্তত এড়ানো গেছে।

ন্যাশনাল র‌্যালি গতকাল রোববার নির্বাচনে সর্বোচ্চ আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

তেমনটা ঘটলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম কোনো কট্টর ডানপন্থী দল ফ্রান্সে সরকার গঠনের সুযোগ পেত। তারা সরকার গঠন করলে দেশটির অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতিতে বড় পরিবর্তন আসত।

নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর জোট দ্বিতীয় স্থান পাচ্ছে। আর ন্যাশনাল র‌্যালি তৃতীয় স্থান। নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পাচ্ছে ফ্রান্স। এ নিয়েও ফ্রান্সের মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ আছে।

ইতিমধ্যে ফ্রান্সের বেশ কিছু মিত্রদেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের আশঙ্কা আপাতত এড়ানো সম্ভব হওয়ায় তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।

ইউক্রেনের মিত্রদের আশঙ্কা ছিল, ফ্রান্সে লো পেনের নেতৃত্বাধীন সরকার এলে তারা মস্কোর প্রতি নমনীয় হতে পারে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে ফ্রান্সসহ অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রের সহায়তার ওপর নির্ভর করে আসছে কিয়েভ। লো পেন সরকার গঠন করলে এ সহায়তা কমিয়ে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। যদিও সম্প্রতি তাঁর দল রাশিয়াকে ‘হুমকি’ বলে আখ্যা দেয়।

ইউরোপে কট্টর ডানপন্থীদের জনপ্রিয়তায় সাময়িক ভাটা পড়েছে, আপাতত সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে ন্যাশনাল র‌্যালির পরাজয়। এখন নতুন সরকার গঠনের কাজটি মোটেই সহজ হবে না। বরং জোট সরকার গঠন দেশটির রাজনৈতিকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

কট্টর ডানপন্থীদের পরাজয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেন, প্যারিসে উদ্দীপনা, মস্কোয় হতাশা, কিয়েভে স্বস্তি। ওয়ারশের (পোল্যান্ডের রাজধানী) খুশি হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসের বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র নিলস স্কিমিড বলেন, ভয়াবহ খারাপ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে অস্পষ্টতার মধ্যেই কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকলেও রাজনৈতিকভাবে প্রেসিডেন্টের অবস্থান এখন দুর্বল। এর জন্য সরকার গঠন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের দল ফ্রান্সের বাম জোট নিউ পপুলার ফ্রন্টকে নির্বাচনে জেতায় অভিনন্দন জানিয়েছে। দলটির ভাষ্য, বাম জোট কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের পথ রুখে দিয়েছে।

গ্রিসের সোশ্যালিস্ট পাসোক পার্টির প্রধান নিকোস এন্ড্রুলাকিস বলেন, ফ্রান্সের জনগণ কট্টর ডান, বর্ণবাদ ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে একটি দেয়াল তুলে দিয়েছে। ফ্রান্সের দীর্ঘদিনের মূলনীতি: স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের সুরক্ষা করেছে।

লো পেনকে রুখে দেওয়ায় কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোও ফ্রান্সকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন অনেক যুদ্ধ আছে, যেগুলো খুব অল্প দিনের জন্যই স্থায়ী ছিল। কিন্তু এসব যুদ্ধে মানবজাতির ভাগ্য লেখা হয়েছে। ফ্রান্সও এমন একটি যুদ্ধের (ভোটের লড়াই) মধ্য দিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক কর্মকর্তা একে বড় স্বস্তির বিষয় বলে উল্লেখ করেন। তবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইউরোপের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।

উদ্বেগের আরও বড় কারণ, নির্বাচনে তিন পক্ষের কেউই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এই তিন পক্ষের একসঙ্গে কাজ করারও ইতিহাস নেই। এমন অবস্থায় দেশটি এখন ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পাওয়ার পথে রয়েছে।