রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর মূল লড়াই চলছে মূলত ইউক্রেনের খারকিভ, জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে। এসব অঞ্চলের একের পর এক এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবি করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। গত এক মাসে তারা ৬০০টির বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খেরসনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।
সম্প্রতি ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করা হয়। যুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পাল্টা হামলা জোরদার করে ইউক্রেনের বাহিনী। ‘ইউক্রেনস মিনিস্ট্রি ফর রিইন্টিগ্রেশন’ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত এক মাসে তারা ৬০০টির বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। এর মধ্যে খেরসনের গুরুত্বপূর্ণ ৭৫টি এলাকা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি এলাকা উদ্ধার করা হয়েছে খারকিভ অঞ্চলে। সেখানকার ৫০২টি এলাকা দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দোনেৎস্কের ৪৩টি এলাকা ও লুহানস্কের ৭টি এলাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রধান ভালেরি জালুঝনি বলেন, যুদ্ধে ক্ষেত্রের অবস্থা জটিল তবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম দিকে রাশিয়া যেসব এলাকা দখল করে নিয়েছিল, পাল্টা হামলার মাধ্যমে সেই সব এলাকা ফিরে পাচ্ছে ইউক্রেনের বাহিনী। তিনি বলেন, ‘ভয়ংকর এই যুদ্ধে এখনো বৃষ্টির মতো রাশিয়ার গোলা আঘাত হানছে ইউক্রেনের মাটিতে। আমরা আমাদের জমির প্রতিটি টুকরা আঁকড়ে ধরে রেখেছি, রুশ বাহিনীর আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছি। রুশ সেনাবাহিনী অজেয় বলে যে মিথ প্রচলিত রয়েছে, সেই মিথ আমরা কবর দিয়েছি। এখন আমরা আমাদের জমি ফেরত পাচ্ছি। কেউ এবং কোনো কিছু আমাদের থামাতে পারবে না।’
ইউক্রেনের বাহিনীর এই অগ্রগতি থামাতে খেরসনে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে রুশ বাহিনী। সেখান থেকে সাধারণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুল্লিন ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়ার রোস্তভ এলাকায় খেরসনের বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া হবে। তবে এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে ইউক্রেন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে মূলত ইউক্রেনীয়দের নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে এসব অঞ্চলে রুশ বাহিনী পিছিয়ে গেলেও জাপোরিঝঝিয়ায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। সেখানে শুক্রবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ক্রেমলিন। এই হামলার পর সেখানকার ইউক্রেনীয় প্রশাসন স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার রাশিয়ায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেলগোরোদের নভি অসকোল শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। এতে সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং রেলসেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে নতুন পথে হাঁটছে পশ্চিমা বিশ্ব। এ জন্য বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কাউন্সিলের পার্লামেন্টে (পিএসিই) একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট হয়েছে। মূলত রাশিয়ার বর্তমান সরকারকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিতে এই ভোট হয়।
পিএসিইতে রয়েছে ইউরোপ অঞ্চলের ৪৬টি দেশ। এসব দেশের ১০০ জন প্রতিনিধির মধ্যে ৯৯ জন প্রতিনিধি এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোটদানে বিরত ছিলেন তুরস্কের প্রতিনিধি।
পিএসিইতে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের শহরগুলোয় দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং অনেকে মারা যাচ্ছেন। রাশিয়ার কৌশলকে সন্ত্রাসী নীতি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে। কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া রুশ বাহিনীকে ইউক্রেন থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পিএসিই।