ফিনল্যান্ডে প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি এভাবে পার্টি করতে পারেন

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন
ছবি: রয়টার্স

একটি পার্টিতে অংশ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন। এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, ৩৬ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী বন্ধুদের সঙ্গে নাচছেন–গাইছেন, ক্যামেরার দিকে পোজ দিচ্ছেন। হাঁটু গেড়ে বসে মাথার পেছনে দুই হাত দিয়েছেন সান্না মারিন। কয়েকজন বন্ধু মিলে আলিঙ্গন করেন। বন্ধুদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরার।

বয়সে তরুণ কিংবা তরুণ নন, ফিনল্যান্ড বা বিশ্বের যেকোনো দেশে এমন অসংখ্য মানুষকেই এভাবে পার্টি করতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমন পার্টির বহু ভিডিও চিত্র রয়েছে। কিন্তু সান্না মারিনের পার্টির ভিডিও নিয়ে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য এভাবে প্রকাশ্যে আসাটা কতটা শোভন। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দীর্ঘদিন জোটনিরপক্ষে থাকার নীতি বদলেছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য দেশ দুটি ইতিমধ্যে আবেদন করেছে।

এমন পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের পার্টির ভিডিও অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। ফিনল্যান্ডের মধ্য–বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন সান্না মারিন। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর ওই পার্টিতে মাদক ছিল কি না? মদ ছিল কি না? তিনি কি দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন নাকি গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন করছিলেন? কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সামলানোর মতো অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কি না?

পার্টিতে উপস্থিত কোনো এক ব্যক্তিই যে ভিডিওটি ধারণ করেছেন, তা স্পষ্ট। এ সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর নজরে আসে। মারিন বলেছেন, তিনি সম্প্রতি ওই পার্টিতে অংশ নেন। তবে কোথায় কখন ওই পার্টি হয়েছে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
সান্না মারিন স্বীকার করেন, পার্টিতে তিনি ও তাঁর বন্ধুরা বেশ হইচই করেছিলেন।

সেখানে মদ ছিল, তবে মাদক ছিল না। গত শুক্রবার তিনি বলেছেন, অবৈধ কিছু সেবনের যে জল্পনা–কল্পনা তৈরি হয়েছে, সেটার অবসানে তিনি মাদকের পরীক্ষা করিয়েছেন।

সান্না মারিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আশা করব, ২০২২ সালে এসে এ বিষয়টি যেন সবাই মেনে নেন যে নীতিনির্ধারকেরাও নাচতে, গাইতে ও পার্টি করতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই না এ রকম কোনো ছবি ছড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু বিষয়টিকে তাঁরা কীভাবে দেখছেন, তা একান্তই ভোটারদের বিষয়।’

প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন বিবাহিত। চার বছরের এক মেয়ে রয়েছে তাঁর। তিনি প্রায়ই বলেন যে ফিনল্যান্ডের সরকারপ্রধান হলেও তিনিও আর সবার মতোই। সমবয়সীদের মতোই তিনিও অবসর সময়ে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। সবার মতোই জীবনকে উপভোগ করতে চান।

প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিনের পার্টি করা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন জশুয়া ফেগারহোম। তিনি বলেন, এর (সান্না মারিনের পার্টি) মধ্য দিয়ে ফিনল্যান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং দেশের রাজনীতিকদের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, রাজনীতিকদের নিজেদের শ্রদ্ধার জায়গা এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমার মনে হয় না, এটা ভালো কিছু হয়েছে।’

হেলসিংকির একজন শিক্ষার্থী মিনতু কিলিয়াইনেন তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সবারই ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা রয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, পার্টির ভিডিওতে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। কিলিয়াইনেন বলেন, ‘এটা অন্য পার্টির মতোই স্বাভাবিক। তাঁর জীবনেও আনন্দ থাকাটা উচিত।’

সান্না মারিনের কিছু অনুসারী ও সমর্থক আবার উল্টো অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নারী বিদ্বেষের শিকার।

২০১৯ সালে মারিন যখন ফিনল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। নারী ও পুরুষের সমতায় বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত নর্ডিক দেশ ফিনল্যান্ডেও মারিন অনুভব করেছিলেন, কখনো কখনো তাঁর লৈঙ্গিক পরিচিতি ও বয়স খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০২০ সালে ভোগ ম্যাগাজিনকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এত দিন পর্যন্ত যত ধরনের পদে ছিলাম, সব ক্ষেত্রে শুরুতেই যে বিষয়টি এসেছে সেটি হলো, আমার লৈঙ্গিক পরিচয়। তা হলো আমি একজন তরুণী।’

ফিনল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আনু কোইভোনেন বলেন, যে ভিডিওটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেখানে জেন্ডার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করেছে তা মনে করেন না তিনি। তিনি বলছেন, পার্টি করা কোনো বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যাদের সঙ্গে থাকেন, সেই সব ব্যক্তিকে তিনি কতটা আস্থায় রাখতে পারেন সেটি।

অধ্যাপক আনু কোইভোনেন বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমন একটি সঙ্গ থেকে নিজেকে আটকাতে পারেননি, যেখানে সবাই তাঁর বিশ্বস্ত নন। আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে এটাই বড় বিষয়।’